শুক্রবার || ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
১৫ দিন পর গাজীপুরে বিক্ষোভ নেই, উৎপাদন চলছে পুরোদমে
প্রকাশিতঃ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবি, ৭:৪৫ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ৩৬ বার।
টানা শ্রমিক বিক্ষোভে দুই সপ্তাহের বেশি সময় অস্থিতিশীল থাকার পর গাজীপুর শিল্পনগরীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জেলার কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। কারখানাগুলোতে পুরোদমে চলছে উৎপাদন কার্যক্রম। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় ইতিমধ্যে বন্ধ থাকা অধিকাংশ কারখানা চালু হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২১ আগস্ট ৬ দফা দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন টঙ্গীর ‘বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’ কারখানার শ্রমিকেরা। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য কারখানায় আন্দোলন শুরু হয়।
মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার আন্দোলন শুরু হয়। এরপর প্রতিদিনই শ্রমিক বিক্ষোভ লেগে ছিল। দাবি আদায়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। ঝামেলা এড়াতে ছুটিসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় অনেক কারখানা।গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ গাজীপুর পুরোপুরি শান্ত। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত (বিকেল পাঁচটা) কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। সকাল থেকেই কারখানাগুলোতে পুরোদমে উৎপাদন চলছে। শ্রমিকেরা স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কাজ করছেন। শ্রমিক বা কারখানার নিরাপত্তায় জায়গায় জায়গায় পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গাজীপুরে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা ১ হাজার ১২০টি ও অন্য কারখানা ১ হাজার ৫১৩টি। এ ছাড়া অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। সব মিলিয়ে এসব কারখানায় ২২ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন।
আজ সকালে নগরের গাছা, বাসন, তারগাছ, কুনিয়া, ধীরাশ্রম, টঙ্গী বিসিকের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা যায়, সকালের বৃষ্টি বা বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দলে দলে কারখানায় যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। কোনো কারখানায় শ্রমিকেরা উৎপাদনকাজ শুরু করেছেন। কোথাও কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা আন্দোলন নেই। শ্রমিক বা কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কয়েকটি কারখানার সামনে শিল্প পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে।টঙ্গী বিসিকের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক মোসাম্মত রোকসানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমগোর ফ্যাক্টরিতে কোনো ঝামেলা ছিল না। কিন্তু পাশের কারখানার ঝামেলার কারণে স্যাররা আমাগোর কারখানা দুই দিন বন্ধ রাখছিল। এহন আর ঝামেলা নাই। আমরা রেগুলার কাজ করতাছি।’
শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে হামলা বা ভাঙচুরের আশঙ্কায় তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল টঙ্গীর পিনাকি গ্রুপের এজি ড্রেসেস লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানাটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রাকিব হাসান আজ বিকেলে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় শ্রমিকদের কোনো দাবি-দাওয়া ছিল না। কিন্তু অন্যান্য কারখানার ঝামেলার কারণে আমাদের কারখানা তিন দিন বন্ধ (ছুটি) রাখতে হয়েছে। ওই তিন দিনে যে ক্ষতি হয়েছে, এখন সবাইকে সেই ধকল সামলাতে হচ্ছে।’
বন্ধ ৮ কারখানার ৪টি চালু
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা আটটি কারখানার মধ্যে আজ চারটি চালু হয়েছে। কারখানাগুলো হলো শ্রীপুরের অ্যাসরোটেক্স লিমিটেড, জয়দেবপুরের অ্যাপারেলস-২১ লিমিটেড, এস এম নিটওয়্যার লিমিটেড ও বাসন এলাকার বেসিক ক্লথিং লিমিটেড কারখানা। শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্মঘটের কারণে কারখানাগুলো বন্ধ করা হয়েছিল।
এস এম নিটওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কারখানায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার শ্রমিককাজ করেন। এক দিন কাজ বন্ধ থাকলে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। সেখানে চার দিন ধরে কারখানা বন্ধ। এখন চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।