শনিবার || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
অসুস্থ খালেদা জিয়াকে গভীর রাতে ঢাকার হাসপাতালে নেয়া হলো
প্রকাশিতঃ ১ এপ্রিল ২০২৪, সোম, ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৯৩ বার।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে শনিবার দিবাগত গভীর রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।
রাত দুইটা পঞ্চাশ মিনিটে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় জানানো হয় যে, চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বেগম খালেদা জিয়া রাত দুইটা ত্রিশ মিনিটে বাসা থেকে রওনা হন। পরে রাত তিনটা নাগাদ তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অনেক দিন ধরেই চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তার নিজস্ব মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা গুলশানের বাসায় গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।
এরপর রাতেই তাকে হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
মিসেস জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই লিভার ও হার্টের সমস্যা, আথ্রাইটিস, ফুসফুস, ডায়াবেটিস এবং চোখের সমস্যাসহ নানা ধরনের অসুস্থতার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তার দল বিএনপি বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে এবং এ জন্য নানা কর্মসূচিও পালন করেছে ।
সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার পরিবার থেকেও কয়েক দফা আবেদন করা হয়েছে। তবে সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
চলতি মাসের শুরুতেও মিসেস জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে আবারো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলো তার পরিবার।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাবন্দী হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে সেই সাজা বাড়িয়ে দশ বছর করে হাইকোর্ট। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাতেও তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এর দুই বছর পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে তাকে বিদেশে না যাওয়া এবং নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া- এই দুই শর্তে কারাগার থেকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়।
পরবর্তীতে কয়েক দফায় সেই মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার।
বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে
২০১৮ সালে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রায় দুই বছর জেলেই ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এরপর করোনা মহামারির সময়ে তার দণ্ড স্থগিত করে নির্বাহী আদেশে তাকে শর্তযুক্ত মুক্তি দিয়েছিলো সরকার।
এরপর বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে অসুস্থতা বেড়ে গেলে তাকে দফায় দফায় হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়।
দুই হাজার একুশ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। সে বছরেরই ২৮শে নভেম্বর তার চিকিৎসকরা ঢাকায় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এরপর টানা দুইমাস একুশ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০২২ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।
পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই বছরের জুনেই হাসপাতালে নিয়ে তার এনজিওগ্রাম করানো হয় এবং এরপর তার আর্টারিতে একটি রিং স্থাপন করার তথ্য জানান তার চিকিৎসকরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন মিসেস জিয়ার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে ও পরে হাসপাতালেই তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছিলো।
পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার বাসায় ফিরলেও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই ছিলেন তিনি। ওই বছরের অগাস্টে আবার তাকে দুদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।
গত বছরও বিভিন্ন সময়ে নানা জটিলতার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিলো।
বিশেষ করে গত বছরের নয়ই অগাস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়ে একনাগাড়ে পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাসায় ফিরেন তিনি।
এর মধ্যে গত অক্টোবরেই তার রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন চিকিৎসককে এনেছিলো তার দল।
সবশেষ গত তেরই মার্চ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেয়ার পরদিন তিনি বাসায় ফিরেছিলেন।