রবিবার || ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রাণিসম্পদের ৩ কর্তার কেলেঙ্কারি খুঁজছে দুদক
প্রকাশিতঃ ২২ নভেম্বর ২০২৩, বুধ, ৮:২৮ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১০৫ বার।
ছাগলের পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের তীর যাদের দিকে তারা হলেন- সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী মন্ডল, বর্তমান প্রকল্প পরিচালক অমর জ্যোতি চাকমা ও ক্যাশিয়ার আব্দুল কাইয়ুম। নিম্নমানের ভ্যাকসিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগসের বিরুদ্ধে দুদক কোনো আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
দুদকের নোটিশ সূত্রে জানা যায়, পিপিআর ভ্যাকসিন ক্রয়ে অনিয়ম ও নিম্নমানের ভ্যাকসিন ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের ২৩ কোটি ৫১ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছেন। আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের অনুমোদন দিয়েছে দুদক। প্রকল্পটির সাবেক পিডি ডা. ফজলে রাব্বি মন্ডল ও বর্তমান পিডি ডা. অমর জ্যোতি চাকমাকে ১২ নভেম্বর এবং ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুমকে ১৩ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে দেশের ৬৪ জেলায় ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য গত ১০ অক্টোবর ২০২২ সালে একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের শর্ত ছিলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন দুইটি চুক্তিতে ৩০ কোটি টাকার কাজ ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালকের পছন্দের ঠিকাদারের অভিজ্ঞতা বা শর্ত পূরণের যোগ্যতা না থাকায় চারটি দরপত্র জমা হলেও তাদের নন-রেসপনসিভ করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। যা সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
পুনরায় আহ্বানকৃত দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে পিডি তার নিজস্ব ঠিকাদার মেসার্স টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের ইচ্ছা অনুযায়ী পূর্বের শর্ত বাদ দিয়ে নতুন শর্ত দেন শুধুমাত্র তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে। টেকনো ড্রাগসের ভেটিরিনারি পণ্য সরবরাহের অভিজ্ঞতা না থাকায় দরপত্র নীতি ভঙ্গ করে ফার্মাসিটিক্যাল আইটেম (কনডম ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল) এর অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। প্রথম দরপত্রে ২ বছর ও ৩০ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও দ্বিতীয় দরপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ টেকনো ড্রাগসের এই দুই অভিজ্ঞতার কোনোটাই নেই। দরপত্রের আর একটি শর্ত ছিলো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বছরে ন্যূন্যতম চাহিদাকৃত ভ্যাকসিন উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু যোগানদাতা নেপালের হোস্টার কোম্পানির সেই সক্ষমতা ছিলো না বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি জানার পরে পিডি অমর জ্যোতি চাকমা কার্যাদেশ পত্রে দুই ধাপে ২ কোটি ৫০ লক্ষ করে মোট ৫ কোটি ভ্যাকসিন সরবরাহের কথা উল্লেখ করেন। দরপত্রে উল্লেখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ভ্যাকসিনের গুনগত মান ও সক্ষমতা হোস্টার কোম্পানির ভ্যাকসিনে ছিলো না। তবুও গ্রহণকারী কমিটিকে পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ক্যাশিয়ার কাইয়ুম ম্যানেজ করে ভ্যাকসিন করেন।
সরবরাহকৃত ভ্যাকসিনটির গুনগত মান ও সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য পাবলিক হেলথ ও সিডিআইএল এ পাঠানোর বিষয়টি দরপত্রে উল্লেখ থাকলেও পিডি শুধুমাত্র বিভাগীয় ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে নিজের মতো নমুনা অনুমোদন করে নেন। ল্যাব টেস্ট করানোর আগেই টেকনো ড্রাগসের সরবরাহকৃত ভ্যাকসিন গ্রহণ করেই দ্রুত প্রথম ধাপের বিল পরিশোধ করেন। সরকারি ড্রাগ টেস্ট ল্যাবে পরীক্ষা করলে চাহিদাকৃত ভ্যাকসিনের সঙ্গে সরবরাহকৃত ভ্যাাকসিনের পার্থক্য উঠে আসবে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে সরকারি ২৩ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্রয়কৃত ভ্যাকসিনগুলো কোনো কাজে আসবে না।
গ্রহণকৃত ভ্যাকসিন যথাযথ মানসম্মত কিনা তা ছাগলের গায়ে পুশ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিডির অনুরোধে ডিজি এই বছরের ১৩ আগস্ট সাভার ছাগলের খামারের কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠান। পরবর্তীতে খামার কর্মকর্তা ২০ আগস্ট একটি প্রতিবেদন পাঠান। নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক টেস্টের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের নিয়ম থাকলেও প্রতিবেদন দেওয়ার এক মাস আগে বিল পরিশোধ করা হয়। আবার দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ভ্যাকসিনসমূহ যথাস্থানে পৌঁছানোর পর বিল পরিশোধের কথা থাকলেও তা অমান্য করা হয়। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, ভ্যাকসিনের গুনগত মান যাচাই না করে বিল দেওয়ার বিষয়টিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদারের সঙ্গে। গত ৯ নভেম্বর কয়েক দফা ফোনকল ও এসএমএস পাঠিয়েও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টেকনো ড্রাগসের বক্তব্যের জন্য ১৫ নভেম্বর ফোন দেওয়া হলে তারা প্রতিবেদনের জন্য কোনো বক্তব্য না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে প্রতিবেদককে অফিসে চা পানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।