শনিবার || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
অবরোধের শেষ দিনে বেড়েছে যান চলাচল, বিএনপি নেতা-কর্মী ‘আটক’
প্রকাশিতঃ ২ নভেম্বর ২০২৩, বৃহঃ, ৩:২৯ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৬০ বার।
বাংলাদেশে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল বিএনপির ডাকা তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় ও শেষ দিনে রাজধানীতে গণপরিবহনসহ সব ধরণের যান চলাচল বেড়েছে।
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি ও সায়েন্সল্যাব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব ধরণের গণপরিবহনের চলাচল গত দুদিনের তুলনায় বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল খুব একটা দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন অফিস-আদালতের যানবাহনের চলাচল চোখে পড়েছে।
তৃতীয় দিনে গণপরিবহনের পাশাপাশি অফিসগামী মানুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল।
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে তেমন কোন দূর পাল্লার বাস না ছাড়লে দুপুরের পর টার্মিনালে যাত্রীদের আনাগোনা বেড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হওয়ায় আগামী দুই দিনের ছুটির কারণে অনেকেই শেষ বেলায় ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা করছেন।
রাজধানীর তুলনায় ঢাকার বাইরে যান চলাচল এখনো বাড়েনি বলে জানিয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা আকবর হোসেন।
মহাসড়কেও যান চলাচল কম দেখা যাচ্ছে।
এর আগে গত দুই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, গাড়িতে আগুন দেয়া, হামলা এবং ভাংচুরের খবর পাওয়া যায়।
বুধবার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। এদিন কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় এবং কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করেছে বিএনপি।
গত ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ এবং পরের দিন হরতালের পর গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের সর্বাত্মক এই অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি।
ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় ছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা আকবর হোসেন। তিনি জানান, ঢাকার বাইরের রাস্তায় গণপরিবহনের জন্য মানুষজনের ভিড় চোখে পড়েনি।
যারা এদিন বের হয়েছেন তাদের অনেকে জানিয়েছেন, দরকার না হলে কেউ অবরোধের সময় বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।
আর অতি প্রয়োজনে দূরে কোথায় যেতে হলেও বড় কোন যানবাহন ব্যবহার না করে বরং ছোট ছোট যানবাহনে করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তারা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতী টোল প্লাজার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল অবরোধের সময় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মিলিয়ে বাস ও মিনিবাস চলাচল করেছে ৮০০টির মতো গাড়ি। স্বাভাবিক দিনে এই রাস্তায় ২২০০-২৫০০টির মতো বাস-মিনিবাস চলাচল করে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই চলেছে রাতের বেলায়।
মহাসড়কে মালবাহী লরি বা ট্রেইলারের চলাচল গণপরিবহনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে বলে জানান মি. হোসেন। গোমতি টোল প্লাজার তথ্য উল্লেখ করে তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে এই রাস্তা দিয়ে এক হাজারের মতো এসব যান চলাচল করলেও গতকাল চলেছে ৬০০টির মতো।
মহাসড়কের খাবারের দোকানগুলিতেও তেমন কোন ক্রেতা বা যাত্রী দেখা যায়নি। মহাসড়কের কোথায় বিএনপির নেতাকর্মীদের চোখে পড়েনি। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিছিল করতে দেখা গেছে।
অবরোধের কারণে মহাসড়কের পাশের বাজারগুলো থেকে কোন সবজি ঢাকায় না যাওয়ার কারণে এসব বাজারগুলোতেও কোন ভিড় নেই। কৃষকরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
ঢাকার বাইরে মহাসড়কগুলোতে পুলিশ, বিজিবি বা র্যাবের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে যান চলাচল কম ছাড়া ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।
মানুষের যাতায়াত ও চলাচল কম হলেও মহাসড়কের ধারে থাকা স্কুলগুলো খোলা রয়েছে। বড় ধরণের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি।
উত্তরায় বাসে আগুন
রাজধানী ঢাকার উত্তরার আজমপুরে পরীস্থান পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা চার মিনিটে বাসটিতে আগুন দেয়া হয়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সকাল সাতটা ৩৩ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা।
বাসটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করেছে।
এছাড়া এখনো পর্যন্ত রাজধানীর আর কোথাও আগুন লাগার মতো কোন ঘটনার খবর তারা পাননি বলেও জানান।
বিএনপির চার নেতাকর্মী আটক
বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় দলটি দাবি করেছে যে, রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের চার কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বরাত দিয়ে ওই বার্তায় দাবি করা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ, পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া এবং গাড়ি চালক মাহবুবসহ চার জনকে আটক করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ তাদেরকে গুলশানের একটি বাসা থেকে দরজা ভেঙ্গে আটক করে নিয়ে যায় বলে বার্তায় দাবি করা হয়।
তবে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
পুলিশকে কোপানোর ঘটনায় ১০ জন আটক
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গত মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পুলিশের সাথে এই সংঘর্ষ হয়। সেসময় পুলিশের তিন সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয় বলে জানায় র্যাব।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর গুলোতে পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়, অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির সমর্থকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করে। সেখান গাড়ি ভাঙচুর করা হলে দায়িত্বরত পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বাধলে কুপিয়ে ও পিটিয়ে পুলিশের তিন সদস্যকে আহত করা হয়।
রাঙ্গুনিয়ায় বাস ভাঙচুর ও আগুন
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বনগ্রাম এলাকায় দাঁড় করিয়ে রাখা দুটি বাসে ভাঙচুর এবং একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান সুমন বিবিসি বাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার ভোর রাত চারটা ১০ মিনিটের দিকে বাসগুলোতে আগুন দেয়া হয়।
পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তারা প্রায় আধা ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মি. সুমন জানান, যে দুটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে সেগুলোতে ওই বাসের কর্মীরা আটকে পড়েছিলেন। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে তাদেরকে মুক্ত করে।
ভাঙচুর ও আগুন লাগার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলেও জানান তিনি।
এর আগে বুধবারও রাঙ্গুনিয়ায় আরেকটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছিল।