রবিবার || ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ক্রিকেটের কোন নিয়মে আম্পায়ার ওয়াইড না দিতে পারেন?
প্রকাশিতঃ ২১ অক্টোবর ২০২৩, শনি, ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১২৮ বার।
পুনেতে গতরাতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত সহজ একটা জয় তুলে নিয়েছে, যেখানে শতক হাঁকিয়েছেন ভিরাট কোহলি। ম্যাচসেরার পুরস্কারও পেয়েছেন ভারতের হয়ে ৪৮তম ওয়ানডে শতক হাঁকানো এই ক্রিকেটার।
তবে ভারতের সহজ জয়ের রাতে আলোচনা হয়েছে নাসুম আহমেদের করা একটি বল নিয়ে। খালি চোখে অনেকেই ওয়াইড বল মনে করলেও, রিচার্ড ক্যাটলবোরো ওয়াইড দেননি। এর বদলে থুতনিতে হাত দিয়ে একটা মুচকি হাসিই দিলেন ব্রিটিশ আম্পায়ার।
নাসুমের এই ওয়াইড বলটি ইচ্ছাকৃত কী না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল ম্যাচ শেষে, পরে প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, এটা নিয়ে কোনও কথাই হয়নি দলের মধ্যে, ওয়াইডটি ইচ্ছাকৃত ছিল না।
এর আগের ওভারেও হাসান মাহমুদ মাথার ওপর দিয়ে বাউন্সারে একটি ওয়াইড বল দেন, ভিরাট কোহলির অভিব্যক্তি ছিল দেখার মতো।
কোহলির যখন সেঞ্চুরির জন্য ২৭ রান প্রয়োজন, তখন ভারতের জয়ের জন্য ২৮ রান বাকি ছিল। এমন অবস্থা থেকেই কোহলির সঙ্গী কেএল রাহুল আর রান নেয়ার চেষ্টা করেননি, গোটা স্টেডিয়াম তখন কোহলির শতকের জন্য অপেক্ষা করে ছিল।
শেষ ২৮ রান কোহলিও নিজেই নেয়ার চেষ্টা করেছেন।
ম্যাচ শেষে সম্প্রচারকদের ক্যামেরায় কেএল রাহুল বলেন, কোহলি একটা সময় বলছিলেন, সেঞ্চুরির জন্য খেলাটা বাজে দেখায়।
রাহুল যোগ করেন, “তখন আমি তাকে বলি, আমরা সহজেই জিতবো। এটা নিয়ে ভাবনার কিছু নেই”।
এটা ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভিরাট কোহলির তৃতীয় শতক, এর আগের দুটি ছিল ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এবং ২০১১ সালে কোহলির প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ ম্যাচে, বাংলাদেশের বিপক্ষে, মিরপুরে।
যদিও অনেকেই এটা নিয়ে তুমুল সমালোচনা করছেন। টুইটারে ভারতের জয় ও কোহলির শতক ছাপিয়ে, এই ওয়াইড না দেয়ার ইস্যুই এখন ট্রেন্ডিং।
টুইটারে ক্রিকেট অনুরাগী পিটার ডেলা পেনা লিখেছেন, “আমি বাংলাদেশি বোলার হলে পাঁচটা ওয়াইড বল ছুড়তাম”।
তবে অনেকই কোহলির এবং আম্পায়ারের প্রশংসা করেছেন।
বলছেন, বোলার যদি ইচ্ছা করে ওয়াইড বল দিয়ে থাকেন তবে এটা অন্যায় হতো। সেক্ষেত্রে আম্পায়ারই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ওয়াইড বলের ক্ষেত্রে নিয়ম কী?
ক্রিকেট খেলাটা আদিকাল থেকেই পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে গেছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নিয়মকানুনের সাথে ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতে হয়।
ক্রিকেটের এসব আইন-কানুন নিয়ে কাজ করে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। এই ক্লাবটির রুল বুকের ২২.৪.১ এ লেখা রয়েছে আম্পায়ার একটা বল ওয়াইড নাও দিতে পারেন যদি ব্যাটার বলটি পেটাতে বলের দিকে সরে আসেন বা বল থেকে বিপরীত দিকে সরিয়ে নিয়ে যান নিজেকে।
গতকালের ওয়াইড বলটিতে কোহলিকে অফ সাইডের দিকে সরে আসতে দেখা গেছে।
তবে নিয়মের খাতিরে এটা বলা গেলেও, অন্য অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে দেখা গেছে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে থেকে বল বেড়িয়ে গেলে সেটি ওয়াইড বলেই সিগন্যাল দেন আম্পায়াররা, এটাই স্বাভাবিক।
যে কারণে ম্যাচ শেষে শুভমন গিলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি হেসে দিয়েছেন এবং পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, “কোনটায় অবাক হবো? ডেলিভারিতে নাকি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে?”
তবে শুভমন গিলের মনে হয়নি নাসুম বলটা ইচ্ছা করে করেছেন, তিনি বলেন, “বোলার হয়তো স্ট্যাম্পে বলটা করতে গিয়ে ওরকম হয়ে গেছে”।
কী হয়েছে ভারত বাংলাদেশ ম্যাচে?
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ম্যাচটি নিয়ে উত্তেজনা ছিল চরমে, মাঠে নামার পর থেকে বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাবধানী শুরু করেন।
লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটিং নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছিল বিশ্বকাপের শুরু থেকেই।
তারা দুজন ৯৩ রানের একটি জুটি গড়েন, যা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড।
তানজিদ হাসান তামিম ৫১ রান করেন, কিন্তু ৯৩ থেকে ১৩৭ রান স্পর্শ করতেই বাংলাদেশ চার উইকেট হারায়।
লিটন দাস ৬৬ রানে থাকা অবস্থায় ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এগিয়ে এসে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন।
সেখান থেকে বাংলাদেশের স্কোরটাকে ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে যান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
রিয়াদ ৩৬ বলে ৪৬ রান তুলেছেন।
তবে ২৫৬ রান ভারতের জন্য যথেষ্ট ছিল না কখনোই।
অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও শুভমন গিল প্রথম উইকেট পড়ার আগে ৮৮ রান তোলেন, সেখানেই ভারতের জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।
এরপর ভিরাট কোহলি শ্রেয়াস আইয়ার ও কেএল রাহুলের সাথে দুটি জুটি গড়ে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।
ভারত ৮ ওভার ৩ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত একই রকম জয় পেয়েছে প্রায়।
প্রতি ম্যাচেই রান তাড়া করে জিতেছে ভারত।
এখন নেট রান রেটে পয়েন্ট তালিকায় দুই নম্বরে আছে দলটি।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকায় এক নম্বরে ভারতের রোহিত শর্মা এবং দুই নম্বরে আছেন ভিরাট কোহলি।
তবে ভারতের বোলারদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে চান জনপ্রিয় ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে।
নিজের ভেরিফাইড টুইটার একাউন্টে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “ভারতের বোলাররা যে দারুণ জয় এনে দিয়েছেন সেখানে কোহলির ইনিংসটা শোভাবর্ধন করেছে”।
বিশেষত রাভিন্দ্রা জাদেজা ও কুলদীপ ইয়াদাভ মাঝপথে বাংলাদেশের ইনিংসের গতিরোধ করে উইকেট এনে দিয়েছেন।
সেখানেই মূলত ভারত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া
ব্যাঙ্গালোরে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি শুক্রবার।
পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত পয়েন্ট এবং নেট রান রেটে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে আছে।
তবে পাকিস্তান শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পরে দুই দলের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
বিশেষত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ফর্মে ফিরেছেন মিচেল মার্শ ও অ্যাডাম জাম্পা এবং অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল পাকিস্তানের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাক্সওয়েলের ওয়ানডে গড় ৫২।
ওদিকে পাকিস্তানের নজর থাকবে অধিনায়ক বাবর আজমের দিকে, যিনি গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজে দারুণ পারফর্ম করেছিলেন।
এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান ১০ বার মুখোমুখি হয়েছে, ৬ বারই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ৪ বার পাকিস্তান।