
সোমবার || ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
ভাঙাচোরা আত্মবিশ্বাস নিয়েই হিমালয় থেকে দাক্ষিণাত্যের পথে বাংলাদেশ
প্রকাশিতঃ ১০ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গল, ১১:৩৬ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৬০ বার।

বিশ্বকাপ শুরু হওয়ারও আগে থেকে ব্যাটিং যে বাংলাদেশকে ভোগাতে পারে, এই কথাটা জানাই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ বোলিংয়ের মূল অস্ত্র যে স্পিনাররা, তারাও যে এভাবে আটকে যাবেন তা কে ভেবেছিল!
মঙ্গলবার ধরমশালায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডার যেমন বিপর্যয়ের মুখে পড়ল, তেমনি তাদের বোলিংয়ের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডও কিন্তু ওভারপিছু সোয়া সাতের বেশি রেটে রান তুলে ফেলল।
বিশেষ করে মিডল ওভারগুলোতে ডাউইড মালান ও জো রুট যেভাবে বাংলাদেশের স্পিনারদের নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করলেন, তাতে সাকিব আল হাসান কিংবা মেহেদি হাসান মিরাজ দিনটাকে নিশ্চয় ভুলেই যেতে চাইবেন।
দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে শরিফুল ইসলাম তিনটে চমৎকার স্লোয়ারে জো রুট, জস বাটলার আর লিয়াম লিভিংস্টোনকে তুলে না-নিলে ইংল্যান্ডের স্কোর হয়তো চারশোতে গিয়েও ঠেকতে পারত।
বস্তুত বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলা শেখ মেহেদী ডেথ ওভারে দ্রুত কয়েকটা উইকেট না-তুলে নিলে বাংলাদেশের জন্য আরও দুর্ভোগ অপেক্ষা করছিল।
এরপর বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই উপর্যুপরি আঘাত – তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান-কে পরপর তুলে নিয়ে রিস টপলি যে টাইগারদের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিলেন, সেখান থেকে তারা আর কখনোই সেভাবে উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে এদিন একমাত্র বড় সুখবর ওপেনার লিটন দাসের ফর্মে ফেরা।
উল্টোদিকে পর পর উইকেট পড়তে থাকলেও তিনি কিন্তু একদিক আগলে রেখে ৬৬ বলে ৭৬ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন।
ফলে বুধবার ভোরে বাংলাদেশ দল যখন ধরমশালার কাংড়া এয়ারপোর্ট থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেবে, তখন কোচ চন্ডিকা হাথুরাসিংহে-সহ পুরো দলই প্লেনে উঠবে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে।
ধরমশালা বাংলাদেশকে আসলে একটা ‘মিক্সড ব্যাগ’ উপহার দিল – এ মাঠে তাদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে দাপট দেখিয়ে হারালেও পরের ম্যাচেই কিন্তু ইংল্যান্ড বাংলাদেশের মনোবলে একটা জোর ধাক্কা দিয়ে গেল।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটা একেবারেই ‘ক্লোজ’ ছিল না – বরং ব্যাটে-বলে রীতিমতো পর্যুদস্ত করে টাইগারদের হারিয়েছে ‘থ্রি লায়নস’ – ইংরেজিতে অনেকে যাকে বলেন ‘থ্র্যাশিং’।
উত্তরের হিমালয় থেকে এরপর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরের দুটো ম্যাচ দক্ষিণ ভারতে – ১৩ই অক্টোবর চেন্নাইতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং ১৯শে অক্টোবর পুনে-তে ভারতের বিরুদ্ধে।
সেই দাক্ষিণাত্য অভিযানে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ যে টগবগে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ধরমশালা থেকে রওনা হতে পারছে, তা কিন্তু মোটেই বলা যাচ্ছে না।
হাথুরাসিংহের কণ্ঠে হতাশা
ম্যাচের পরে নির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ যথারীতি পাঠিয়েছিল হেড কোচ হাথুরাসিংহে-কে।
বিশেষত ম্যাচে হারলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কখনোই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে পাঠানো হয় না, এদিনও সেই রীতির কোনও ব্যতিক্রম হয়নি।
এবং হাথুরাসিংহেও পরিষ্কার জানালেন, এদিন প্রথম পাওয়ার প্লে-তে তার ফাস্ট বোলাররা যেমন হতাশ করেছে – তেমনি স্পিনারদের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়নি।
“পাওয়ার প্লে-তে আমরা চেয়েছিলাম বল স্টাম্পে রাখতে। কিন্তু আমাদের ফাস্ট বোলাররা আজ একটু বিবর্ণ ছিল, ওরা সঠিক লাইন-লেংথ রাখতে পারেনি”, জানালেন তিনি।
প্রথম দিকে দু’একটা উইকেট ফেলতে পারলে খেলার ফল সম্পূর্ণ অন্য রকম হতে পারত বলেও দাবি করলেন তিনি।
দলের ব্যাটিং-ও যে তাকে দুশ্চিন্তায় রেখেছে, সেটাও প্রায় খোলাখুলিই স্বীকার করলেন হাথুরাসিংহে। তবে লিটনের ফর্মে ফেরাটা যে দলের পক্ষে শুভ লক্ষণ সেটাও জানালেন।
“লিটন একজন সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। কাজেই ও ফর্মে ফিরলে দল তো খুশি হবেই”, মন্তব্য হাথুরাসিংহের।
আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড দুটো ম্যাচেই পাওয়ার প্লে-তে দু’তিনটে উইকেট হারানোর প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “এটা তো উদ্বেগে রাখার মতোই বিষয়।“
“যতই আপনি সাতজন ব্যাটার খেলান, প্রথমেই দু’তিনটে উইকেট পড়ে গেলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সত্যিই খুব কঠিন!”, বললেন তিনি।
টসে জিতেও বাংলাদেশের ফিল্ডিং নেওয়ার মধ্যে অবশ্য কোনও ভুল দেখছেন না তিনি।
“স্ট্র্যাটেজি ঠিকই ছিল, এক্সিকিউশন বা বাস্তবায়নেই আসলে গন্ডগোল করে ফেলেছি”, সরল স্বীকারোক্তি তার।
সাংবাদিক সম্মেলনে আর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি এটাও জানালেন, ‘টিম ডিরেক্টর’ খালেদ মাহমুদ সুজন, ‘কনসালটেন্ট’ শ্রীধরন শ্রীরাম আর ‘হেড কোচ’ হাথুরাসিংহের মধ্যে দারুণ সমন্বয় আছে – তিনজন মিলেমিশে কাজ করতে তার অন্তত কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।
কিন্তু এই তিনজনের কাজের ‘জব ডেসক্রিপশন’টা ঠিক কী, মানে কার ঠিক কী দায়িত্ব – সেটা তিনি কিছুতেই ভাঙতে চাইলেন না।
মালান ‘ওভার দ্য মুন’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরির পর ডাউইড মালানের মন্তব্য, “বিশ্বকাপে রান পেতে কার না ভাল লাগে?”
“আমার তো নিজেকে ওভার দ্য মুন মনে হচ্ছে!”
“আরও যেটা ভাল ব্যাপার, তা হল বড় ব্যবধানে জেতায় নেট রান রেটেও আমরা অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারলোম।“, ম্যাচের পর দলের সাংবাদিক সম্মেলনে এসে জানালেন ইংলিশ ওপেনার।
মালান দীর্ঘদিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) খেলেছেন, চট্টগ্রাম বা ঢাকার মাঠগুলোও তার ভাল মতোই চেনা।
“সাকিব বা তাসকিনদের আমি অনেক খেলেছি, যদিও ভিন্ন পরিবেশে বা ভিন্ন উইকেটে!”
“কিন্তু সেটা যে আজকে কাজে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না”, জানালেন তিনি।
বাংলাদেশ পিচ রিড করতে ভুল করেছে এবং টসে জিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অ্শ্য মানতে চাইলেন না তিনি।
ভারতে দিন-রাতের ম্যাচ হলে টসের একটা আলাদা গুরুত্ব থাকে, কারণ সন্ধ্যার পর কুয়াশার কারণে বল গ্রিপ করতে বেশ অসুবিধা হয়।
কিন্তু এরকম শুধু দিনের বেলার ম্যাচে, তাও বেশ গরম একটা দিনে – আগে বা পরে ব্যাট করার মধ্যে ফারাক বেশ কমই বলে মালানের দাবি।
স্টেডিয়ামে ‘জয় শ্রীরাম’
তখন ঘড়িতে বেলা দেড়টা মতো বাজে। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার পথে, প্রেসবক্সেও সবে লাঞ্চ পরিবেশন করা শুরু হয়েছে।
ঠিক তখনই মাঠের নর্থ গ্যালারির দিক থেকে খুব জোরে জোরে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠা শুরু হল।
গ্যালারিটা প্রেসবক্সের ঠিক পাশেই, ম্যাচ কভার করতে আসা সাংবাদিকরাও সেই আওয়াজে চমকে না-উঠে পারেননি।
তারপর দেখা গেল শুধু জয় শ্রীরাম নয়, হিন্দুদের নানা ধর্মীয় স্লোগান – যেমন ‘জোর সে বোলো জয় মাতা দি’ সবই সেই গ্যালারি থেকে ভেসে আসছে।
হিমাচল ক্রিকেটের কর্মকর্তারা পড়িমড়ি করে সেই গ্যালারিতে গিয়ে ওই জনতাকে অতঃপর শান্ত করলেন।
কিন্তু রহস্যটা কী? ক্রিকেট মাঠে আচমকা জয় শ্রীরাম কেন?
ধরমশালার স্থানীয় সাংবাদিকরা যা জানালেন, তা অবশ্য বেশ মজারই বলতে হবে।
আসলে ভারতের খেলা না-থাকলে ধরমশালার গ্যালারি ফাঁকা থাকবে, এই আশঙ্কায় স্থানীয় স্কুল-কলেজ ও ক্লাবগুলো থেকে বাসভর্তি করে ছেলেমেয়েদের মাঠে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই পুরো কাজটা করা হচ্ছে হিমাচল ক্রিকেটের অঘোষিত সর্বেসর্বা, ভারতের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুরের নির্দেশনায়।
ধরমশালার এক সাংবাদিক জানালেন, “স্কুল-কলেজ তো ছেলেপিলে আনতে গিয়ে ভুল করে পার্টিরও কিছু ছেলেপিলে আসলে ঢুকে পড়েছে।“
“তা ওদের দোষ দেওয়া যাবে না – স্লোগান বলতে এরা জয় শ্রীরাম কিংবা জয় মাতা দি’-ই জানে, ফলে ক্রিকেট মাঠেও ওটাই শুনিয়ে দিয়েছে”, হাসতে হাসতে বললেন তিনি।
মাঠে এই স্লোগান দেওয়ার ঘটনাটা ঘটেছে মিনিট দশেক ধরে, তবে তা আইসিসি-র নজরে পড়েছে বলে এখনো পর্যন্ত কোনও খবর নেই!
এ জাতীয় আরো সংবাদ

সাফজয়ীদের দেড় কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা বাফুফের
প্রকাশিতঃ ৯ নভেম্বর ২০২৪, শনি, ১০:১৫ অপরাহ্ণ
ভিসা জটিলতায় আমিরাতে যেতে পারেননি নাসুম-নাহিদ
প্রকাশিতঃ ৪ নভেম্বর ২০২৪, সোম, ১১:৩১ অপরাহ্ণ
আফগানিস্তান সিরিজের টাইগারদের দল ঘোষণা, দলে নেই সাকিব-লিটন
প্রকাশিতঃ ১ নভেম্বর ২০২৪, শুক্র, ১০:৫৮ অপরাহ্ণ
বাফুফে ভবনের উদ্দেশে ছাদখোলা বাসে সাফ চ্যাম্পিয়নদের যাত্রা শুরু
প্রকাশিতঃ ৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহঃ, ৯:২২ অপরাহ্ণ
ফিলিস্তিন ফুটবল দল এখন ঢাকায়
প্রকাশিতঃ ১ এপ্রিল ২০২৪, সোম, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ
শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
প্রকাশিতঃ ৬ মার্চ ২০২৪, বুধ, ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ