Dakhinadarpon সীমান্ত নদী ইছামতির ভাঙনে বদলে যাচ্ছে দেশের মানচিত্র ! – Dakhinadarpon
Image

শনিবার || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্ত নদী ইছামতির ভাঙনে বদলে যাচ্ছে দেশের মানচিত্র !

প্রকাশিতঃ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনি, ৭:০৪ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ২২২ বার।

সীমান্ত নদী ইছামতির ভাঙনে বদলে যাচ্ছে দেশের মানচিত্র !

সীমান্ত নদী ইছামতির ভাঙনের কবলে পড়ে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে জমি কমছে। ফলে হুমকীতে পড়েছে বাংলাদেশেরমানচিত্র। প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় প্রশাসনের। নদী ভাঙনরোধ ও দেশের সীমারক্ষায় জরুরী উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশাংকা করেছে এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত নদী ইছামতি। এখন স্পষ্ট বোঝা যায় দুই তীরের পার্থক্য। ভারতের পরিকল্পিত নদী শাষণে বাংলাদেশ অংশে ভাঙন চলছে প্রতিনিয়ত। এতে নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষেরা। আর নদীটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় মানুষ শুধু যে ভিটে-মাটিই হারাচ্ছে তা নয়,জমি হারাচ্ছে দেশ, আর এই ভাঙনের ফলে পাল্টে যাচ্ছে দেশের মানচিত্র।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতসালা ও কোমরপুর গ্রাম থেকে এরইমধ্যে কয়েকশ বিঘা জমি ইছামতির ভাঙনে ভারতের অংশে চলে গেছে।

সবচেয়ে বেশী গেছে রাজনগর মৌজার জমি। বিশেষ করে দেবহাটার মিনি সুন্দরবনের বিপরিত অংশে এবং ভাতশালা এলাকায় নদীসহ ভারতের মধ্যে গড়ে ওঠা বনায়নের কিছু অংশও বাংলাদেশের ভুখন্ড বলে দাবী করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
দেবহাটার টাউনশ্রীপুর গ্রামের ফারুক মাহবুবুর রহমান জানান, তিনিসহ এলাকার লোকজন নদীর মধ্যে চলে যাওয়া জমিতে একসময় ফুটবল খেলেছেন। অনেক স্থাপনা দেখেছেন এখন সেখানে কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেন, ইছামতি নদীর দেবহাটা এলাকার বিপরীতে ভারতীয় অংশে স্পষ্ট যে, নদী ভেঙে বাংলাদেশ যতটা ভূখন্ড হারাচ্ছে ভারত অংশে ততটাই বাড়ছে জমি। নদী ভাঙনরোধে ভারত ইছামতি নদীর পাড় জুড়ে গড়ে তুলেছে সারি সারি ইটের ভাটা। পাশাপাশি বিভিন্ন অংশে ঢালাই করে এবং গাছ লাগিয়ে তারা তাদের বাঁধ রক্ষা করছে। ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার টাকি এলাকায়ইছামতি নদীর পাড় ঘেষে গড়ে তুলেছেশত হোটেল মোটেল। সেখানে রীতিমত গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে ইছামতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।অথচ উল্টো চিত্র বাংলাদেশ অংশে। এখানে প্রতিনিয়ত নদী ভেঙে শত শত বিঘা জমি চলে যাচ্ছে ইছামতির গর্ভে। দেবহাটার ২৪ টি মৌজার মধ্যে১১ নং জে.এল রাজনগর মৌজাটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি রেকর্ডরুমে।তার বাকী অংশ এখন পাশের শিবনগর মৌজার ১২ নং জে.এল এর সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের বিদ্যমান মানচিত্র আকার পরিবর্তনের আশাংকা করা হচ্ছ

দেবহাটার ভাতশালা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান,বেশ কয়েকবছর ধরেনদী ভাঙনের ফলে এরইমধ্যে নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে তার নিজের বাড়িসহবহু বাড়িঘর, খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাদের পৈত্রিক কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেনি। বর্তমানে নদী ভাঙনের ফলে তার বর্তমান বাড়িটিও হুমকীর মূখে পড়েছে।একই এলাকার গোলাম সরোয়ার জানান,বর্তমানে ভাতশালা এলাকায় ইছামতি নদীর যে অংশটি বিদ্যমান আছে তার পুরোটাই আমাদের অংশে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ি নদী যেখান দিয়ে প্রবাহিত হোক না কেন তার মাঝ বরাবর থেকে সীমানা নির্ধারিত হয়ে থাকে। যে কারনে আমাদের জমিতে নদী থাকার পরও আমাদের জেলেরা নদীর মধ্যবর্তী অতিক্রম করতে পারেন না। তাছাড়া নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়া ভূখন্ডও আমাদের বলে দাবী করার সুযোগ থাকছে না। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান তিনি।

এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়ানুর রহমান বলেন, ভাঙন এলাকার নদীর পাড় স্থাপন করার জন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছেন। আমাদের অনেক জমি নদী গর্ভে চলে গেছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনকানুন রীতিনীতি মেনে সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনারউদ্যোগ নেয়া হবে। তবে কী পরিমান জমি আমরা হারিয়েছি তার কোনো হিসেব উপজেলা প্রশাসনের কাছে নেই বলে জানান তিনি। রাজনগর মৌজাটা এখন নেই এটিও স্বীকার করেন তিনি।
দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মুজিবর রহমান বলেন, খানজিয়া থেকে কোমরপুর পর্যন্ত সবখানেই কমবেশী নদী ভেঙেছে। দেবহাটার রাজনগর মৌজাটা আর নেই। বর্তমান নদী যেখানে আছে তার তিনভাগের দুইভাগ বাংলাদেশের। এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামীতে দেবহাটা ম্যানগ্রোভ, দেবহাটা থানা, স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পও নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশাংকা করেন তিনি। দেশের মানচিত্র যাতে বজায় থাকে সে বিষয়ে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) মো. সালাহউদ্দীন জানান, নদী ভাঙনের ফলে দেবহাটা উপজেলার সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকার ছয়টি পয়েন্ট নদী ভাঙন হয়েছে।নদীটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনের ফলে অনেক এলাকায় আমরা জমি হারিয়েছি। বর্তমানে ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে। স্থায়ীবাঁধ ছাড়া এর সমাধান করা সম্ভব নয়। ডেল্টা প্রকল্পের আওতায় নদীতে স্থায়ীবাধ নির্মানের উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। নদী ভেঙে হারিয়ে যাওয়া জমি ফেরত আনার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আ.ন.ম গাউছার রেজার কাছে।তিনি বলেন, নদীর ¯্রােত যে অবস্থায় থাকুক না কেন তার মাঝ বরাবর সীমান্ত নির্ধারিত হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় সীমান্তে কোনো কাজ করতে গেলেও দেড়শ গজ বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয়। কাজে বাধা আসে। অথচ ভারত অনেক আগে থেকেই তাদের দেশের পাড়ের উন্নয়ন করে রেখেছে। এসব দিক বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিল ভারত ও পাকিস্তান।১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন গ্রহণ করা হয়। কনভেনশনের শর্ত ছিল, ৩৫টি দেশ কনভেনশনের প্রতি অনুসমর্থন করলে তা আইনে পরিণত হবে। জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এই আইন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি। সেই বিবেচনায় কনভেনশনে বাংলাদেশের প্রথম অনুসমর্থনকারী দেশ হওয়ার কথা ছিল। অথচ বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত কনভেনশনটিতে অনুসমর্থন করেনি। ১৯৯৭ সালের কনভেনশনটিতে ৩৪টি দেশ অনুসমর্থন দেওয়ার পর দীর্ঘদিন ৩৫তম দেশের অনুসমর্থন পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনো বাংলাদেশ এই কনভেনশনে অনুসমর্থন করেনি। দীর্ঘদিন পর ৩৫তম দেশ হিসেবে ২০১৪ সালের মে মাসে ভিয়েতনাম অনুসমর্থন করেছিল। কনভেনশনটির একটি ধারায় বলা হয়, ৩৫তম দেশের অনুসমর্থনের অবব্যহিত পর তা আইনে পরিণত হবে। সেই ধারা অনুযায়ী একাধিক দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদীর জন্য জাতিসংঘের আইন প্রণীত হয়েছে।
আ.ন.ম গাউছার রেজার আরও বলেন, ভারত থেকে শুধু তিস্তার পানির জন্যই যে আমাদের জন্য আইনটি জরুরি তা নয়, বাংলাদেশ-ভারত স্বীকৃত ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর ৫৩টির পানি আসে ভারত থেকে। এজন্য আমাদের এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমে আমরা সমুদ্র জয় করেছি। সীটমহল সমস্যার সমাধান করেছি। অথচ এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হওয়ার স্বত্বেও এবিষয়ে রাষ্ট্রিয় উদ্যোগ কখনও চোখে পড়েনি। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। ভারতের তুলনায় এর ভূখন্ড অনেক কম। এরপরও যদি প্রতি বছর আমরা এভাবেজমি হারাতে থাকি তাহলে বাংলাদেশ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাষ্ট্র এখনই বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করেসমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রধান উপদেষ্টার সাথে অলি আহমদের সাক্ষাৎ না হওয়ার বিষয়টিকে...

প্রকাশিতঃ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহঃ, ১১:১৫ অপরাহ্ণ

মেঘনায় কুরআন অবমাননার দায়ে যুবক গ্রেপ্তার

প্রকাশিতঃ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহঃ, ১০:২৬ অপরাহ্ণ

শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিতঃ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহঃ, ১০:২৪ অপরাহ্ণ

ধর্ম ও মতের পার্থক্য থাকলেও আমরা সবাই একই পরিবারের...

প্রকাশিতঃ ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহঃ, ১০:১৯ অপরাহ্ণ

শ্বেতপত্র: ২৮ উপায়ে দুর্নীতি, ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন...

প্রকাশিতঃ ২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোম, ১১:৪১ অপরাহ্ণ

সাতক্ষীরায় কর্মী সম্মেলনে জনতার মহাসমুদ্র জাতীয় স্বা‌র্থে দল ও...

প্রকাশিতঃ ৩০ নভেম্বর ২০২৪, শনি, ৬:০০ অপরাহ্ণ

যে ১০টি লক্ষণ দেখলে ডায়াবেটিস রোগের পরীক্ষা করাতে হবে

প্রকাশিতঃ ২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্র, ১১:১৬ অপরাহ্ণ