শুক্রবার || ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সরকার কি কিছু করছে?
প্রকাশিতঃ ৩১ আগস্ট ২০২৩, বৃহঃ, ১০:৪৯ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৫০ বার।
বাংলাদেশে বাজারব্যবস্থার প্রসঙ্গ উঠলে একইসাথে আলোচনায় আসে ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি। সিন্ডিকেট বলতে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মিলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া বা নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলকে বোঝানো হয়। এ কাজ ভালো কিংবা খারাপ দুটোই হতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশে সিন্ডিকেট বলতে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বোঝায় এবং এই শব্দটি নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার হয় আসছে।
যেখানে এক দল ব্যবসায়ী বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে ইচ্ছামতো পণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দাম বাড়িয়ে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জন করে।
অভিযোগ আছে এরকম ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। অর্থাৎ পণ্যের উৎপাদনে কোনও ঘাটতি না থাকা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার পরও তারা গুদামজাত করে এবং সংকটের কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করে। এতে ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে কিছুদিন পর পর কোন না কোন পণ্য সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছে। কখনও মুরগী, পেঁয়াজ, আটা, সয়াবিন তেল, কাঁচা মরিচ, ডিম এমনকি ডাব ও রোগীকে দেয়া স্যালাইনও বাদ যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে সিন্ডিকেট এখন একটি নিয়মিত এবং আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দাম বাড়ানোর পেছনে কোভিড মহামারীর সময় সরবরাহ সংকট, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট নাহলে সরবরাহ সংকট এমন নানা ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে সামনে আনা হয়।
কিন্তু ভোক্তা স্বার্থের পক্ষে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা উল্লেখ করে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ
সরকারের একাধিক মন্ত্রী সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করলেও ক্রেতাকে সুরক্ষা দিতে তাদের কঠোর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
বরং তাদের বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যে ধারণা করা যায় যে, এই কারসাজিতে সরকারই অসহায় হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে গত ২৬শে জুন সংসদ অধিবেশন চলাকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতাদের কঠোর সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন।
মন্ত্রী এমন সমালোচনার জবাবে বলেছিলেন, ‘চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এটা ঠিক যে বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে।”
“আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার- আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম, সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে যে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি” মন্ত্রী বলেছিলেন।
কিন্তু এখন এসে সেই বক্তব্য থেকে ইউটার্ন নিয়েছেন মন্ত্রী। বুধবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেছেন যে, “নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট আছে এমন কথা তিনি বলেননি।
তিনি বলেছেন, “বাজারে সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেট ভাঙব— এ ধরনের কোনও কথা তো আমি বলিনি।”
এর আগে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিন্ডিকেট নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাবে না, এটা কোনও কথা না।’
এ পর্যায়ে, প্রধানমন্ত্রী জানতে চান সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না কোন মন্ত্রী বলেছেন। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা উঠে এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরবো তো।
যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার দীর্ঘ বৈঠক হলেও তিনি তার কাছে এ বিষয়ে কিছু জানতে চাননি।
“মন্ত্রীদের ভেতরেই সিন্ডিকেট আছে”
তবে সিন্ডিকেটের বিষয়ে মুখ খুলে সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়েছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
গত ১১ই মে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘অর্থনীতি ও বাজার দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’
‘আমরা যখন বাজারে যাই তখন দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কেন ঊর্ধ্বগতি? আমাদের কিন্তু কোনও কিছুর অভাব নেই। আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের এই অবস্থা বিরাজ করছে।’ তিনি বলেন।
এর দুইদিন পর ১৩ই মে পাল্টা জবাব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এক সমাবেশে কামাল আহমেদ মজুমদারের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজে মন্ত্রী, সিন্ডিকেট নিজে থামান। এগুলো বললে নিজের গায়ে আসে।’
এরপর কামাল আহমেদ মজুমদার এক দৈনিক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রিসভার সদস্য, আমলাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘মন্ত্রীদের ভেতরেই সিন্ডিকেট আছে। শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা মন্ত্রী।’
সরকারের চেয়ে কি সিন্ডিকেট কি বেশি শক্তিশালী?
সিন্ডিকেটের কাছে সরকারের এই জিম্মি দশা আরও বেশি হতাশায় ফেলেছে ভোক্তাদের। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এতো আলোচনা হলেও এই চক্র থেকে নাগরিকদের মুক্ত করতে সরকারের কার্যকর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে- সরকারের চেয়ে কি সিন্ডিকেট কি বেশি শক্তিশালী?
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মাঠ-পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং প্রতিযোগিতা কমিশন।
তবে সেই অভিযান সিন্ডিকেটের ব্যাপ্তির তুলনায় খুবই নগণ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
এ ব্যাপারে খোদ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, শুধুমাত্র কয়েকটি বাজারে নজরদারি ও জেল জরিমানা করে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামানো অসম্ভব।
কেন্দ্রীয় বিপণন ব্যবস্থার ভেতরে যে অনিয়ম ও অস্থিরতা চলছে সেটি সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করা না গেলে, শুধু অভিযানে কাজ হবে না বলে তিনি জানান।
এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জনবল সংকট পুরনো সমস্যা হলেও এখনও এর সমাধানে কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ঢাকায় ২০০টির বেশি বাজারের জন্য রয়েছে অধিদফতরের মাত্র আটটি দল। জেলা পর্যায়ের অবস্থা আরও করুন। সেখানে মাত্র একজন কর্মকর্তা দিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার নজরদারি করছে৷
মি. সফিকুজ্জামান বলেন, “আমাদের প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জ প্রচণ্ড জনবল সংকট। আমাদের ১৭টি জেলায় কোন কর্মকর্তা নেই। সারাদেশে মাত্র ৭০ জন কাজ করেন। এই জনবল নিয়ে ১৭ কোটি ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব।
তার মতে, ব্যবসায়ীদের অসাধু তৎপরতা থেকে স্থায়ীভাবে বের করে আনতে না পারলে শুধু জেল জরিমানা করে লাভ নেই। এক্ষেত্রে বিপণন ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ প্রয়োজন।
আবার এই নজরদারি দলগুলো মূলত হানা দিচ্ছেন খুচরা আর বড়জোর পাইকারি বাজারে। কিন্তু সিন্ডিকেটের সাথে যে আমদানিকারক, শিল্পপতিরা জড়িত তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
অভিযোগ রয়েছে, এই উঁচু পর্যায়ের সিন্ডিকেটে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা থাকায় তাদের থামানো যাচ্ছে না।
“সরকারও এ কারণে, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামাতে অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করছে না”, এমনটাই মনে করছে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন- কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।
ক্যাবের সহ সভাপতি নাজের হোসেইন বলেছেন, বাংলাদেশে মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে প্রভাব বিস্তার করছে ব্যবসায়ীরা। তাই বাজার ব্যবস্থাপনার যেকোনো সিদ্ধান্ত ব্যবসা আর মুনাফাই প্রাধান্য পাচ্ছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শপথ নেওয়া সংসদ সদস্যদের ১৮২ জনই পেশায় ব্যবসায়ী৷ মোট সংসদ সদস্যের যা ৬২ ভাগ৷
অথচ স্বাধীনতার পর জাতীয় সংসদে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে শুধুমাত্র সাড়ে ১৭ ভাগ ব্যবসায়ী ছিলেন৷
বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে আছেন ব্যবসায়ীরা৷
নাজের হোসেইনের মতে, যারা এ ধরণের কারসাজির সাথে যুক্ত, তাদের কারও বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়নি, শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
এই গাফিলতির কারণে বর্তমানে সিন্ডিকেটের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। আগে একটা দুটা পণ্যে হতো, এখন সব পণ্য সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ছে বলে তিনি জানান।
মি. হোসেইন বলেন, “এক সময় সরকার সিন্ডিকেটের কথা স্বীকারই করেনি। কিন্তু ততদিনে সিন্ডিকেট ডালপালা মেলে আজকের অবস্থানে এসেছে। সরকার এই ডালপালা ছাঁটার কাজটাও করছে না। সরকারের সদিচ্ছার অভাব থাকার কারণেই এর কোন সমাধান হচ্ছে না।”
তবে সরকার এখন থেকেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে না
বাজারে পণ্যের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বজায় রাখার জন্য ২০১৬ সালে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অস্বাভাবিক পণ্য-মূল্য বৃদ্ধি, বাজার সংকুচিত করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৬০টিরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে।
বেশিরভাগ মামলা নিষ্পত্তির পথে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের নৈতিক অবক্ষয়কে দুষছেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
তিনি জানান, “ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপের মধ্য অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা আছে।”
বাজার স্বাভাবিক রাখতে, এই বিশাল বাজারের সাথে যে অংশীজন জড়িত, যেমন কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার- সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের সেই সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে না বলে অভিযোগ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তার মতে, “বিদ্যমান এই দুই সংস্থা তাদের সীমিত ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে না। অনেক সময় তারা যেনতেনভাবে একটা প্রতিবেদন জমা দিয়ে, তদন্ত চলছে বলে দীর্ঘসূত্রিতার জালে ফেলছে।”
“সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন উপকার পাওয়া যাচ্ছে না। এই দুটি সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যেন তার যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারে।”
সেইসাথে যারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে, তদন্ত করে শাস্তি কার্যকর করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এমন নজির সৃষ্টি করা গেলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপ ও দায়বদ্ধতা তৈরি হবে এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মূল সমস্যা বাজার কাঠামোয়
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের মান্ধাতার আমলের বাজার কাঠামো পরিবর্তনের ওপর।
সিন্ডিকেটের প্রভাব বিস্তারের পেছনে বাংলাদেশের ইনফরমাল বাজার ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন তিনি।
সাধারণত, ফরমাল বাজার সিস্টেমে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে যতো এজেন্ট কাজ করে তাদের সবাই নিবন্ধিত থাকেন বা প্রত্যেকের আলাদা বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর থাকে। অনিবন্ধিত কেউ এই বাজারে লেনদেন করতে পারে না।
সেইসাথে, সরকারের নজরদারি সংস্থা, বাজারের প্রতিটি পর্যায়ে লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখতে পারে। কে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ রাখছেন, কে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করছেন বা বিক্রি করছেন, কী দামে বিক্রি করছেন। সব তথ্য সরকারের হাতে থাকে।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় এর কোন সুযোগ সুবিধা নেই। এ কারণে সরকারের কোন সংস্থা বাজারের কোন লেনদেন নজরদারি করতে বা তথ্য রেকর্ড করতে পারে না। ফলে নিয়ন্ত্রণ আরোপও সম্ভব হয় না।
বড় ব্যবসায়ীরা এই দুর্বলতার সুযোগটাই নিচ্ছে বলে জানান মি. মোয়াজ্জেম।
“তারা সরকারের ঘোষিত দামে বিক্রি করছে না, লেনদেনের রিসিট রাখছে না। মজুদের তথ্য গোপন করছে। এভাবে তারা বাজারে একটি অযাচিত প্রভাব বিস্তার করছে।” তিনি বলেন।
এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার ঘাটতি সেইসাথে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক প্রভাব থাকাকে বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে মি মোয়াজ্জেমের পরামর্শ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে আলাদাভাবে টাস্কফোর্স গঠন করা এবং সেই টাস্কফোর্সের পরামর্শে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশমালা তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা।