রবিবার || ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
সুন্দরবনের মধু আহরণের মৌসুম শুরু
প্রকাশিতঃ ৩ এপ্রিল ২০২৩, সোম, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ৭৪ বার।
সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে মধু আহরণ শুরু হয়। এবছর ১ এপ্রিল শনিবার ১২টায় সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় মধু আহরণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জর বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের পর মধু আহরণের অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়। পাস নিয়ে মৌয়ালরা গভীর বনে মধু সংগ্রহ করতে যায়। চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৮০০ কুইন্টাল মধু আহরণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে, প্রতি বছর ১এপ্রিল থেকে মধু আহরণের অনুমতি দেওয়া হলেও গত বছর ১৫ মার্চ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বৃষ্টিস্বল্পতায় খুব একটা মধু পাওয়া যায়নি। ফলে এবছর সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ফের ১ এপ্রিল থেকে অনুমতি দেয়া শুরু হয়। খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ নিয়ে এ বনবিভাগ গঠিত। প্রথমদিনে এ রেঞ্জের আওতায় ৬০টি নৌকার অনুমতিপত্র নিয়ে প্রায় ছয় শতাধিক মৌয়াল গভীর বনে গিয়েছে। ২এপ্রিল থেকে খুলনা রেঞ্জের অফিস থেকে মৌয়ালদের পাশ দেয়া শুরু হয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিমবন বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায়। এবছর সাতক্ষিরা রেজ্ঞের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫ শত কুইণ্টাল মধু ও ২ শত কুইণ্টাল মোম। গত বছর এ রেঞ্জে এক হাজার ৪৪৯ কুইন্টাল মধু ও ৪৩৪ দশমিক ৭০কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়। এ বছর সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগে তিন হাজার কুইন্টাল মধু ও ৮০০ কুইন্টাল মোম পাওয়ার আশা করছেন বনবিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ থেকে ২০২২ সালে ৬৮৮ কুইন্টাল মধু ও ২০৬ দশমিক ৫৬ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়। এ বছর পূর্ব সুন্দরবন থেকে ৮০০ কুইন্টাল মধু ও ২৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্ব বন বিভাগের আওতায় সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায় শরণখোলা রেঞ্জে। এ মৌসুমে শরণখোলা রেঞ্জে ৫০০ কুইন্টাল মধু ও ১৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ থেকে এ বছর সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮০০ কুইন্টাল মধু ও ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল মোম পাওয়া যাবে বলে বনবিভাগ আশা করছে।
মৌয়ালরা জানান, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ও গারণ ফুলের মধু পাওয়া যায়। আর শেষের দিকে কেওড়া, গিউ ও ছইলা ফুলের মধু পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো ও দামী হচ্ছে খলিশা ফুলের মধু। এ বছর হালকা বৃষ্টি হওয়ায় ভালো মধু পাওয়ার আশা করছেন মৌয়ালরা।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, গত বছর মধুর সিজনে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় মধুর পরিমাণ কম হয়েছিল। বৃষ্টির সঙ্গে মধুর একটা সম্পর্ক আছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ফুল ঝরে যায় ও ফুলে মধুর পরিমাণ কমে আসে। এ বছর মার্চ মাসে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। তাই এবার মধুর পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বাড়বে বলে বিশ্বাস রয়েছে।
তিনি জানান, সুন্দরবনে নির্বিঘেœ মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া এবার বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য গ্রুপের একজন মৌয়ালকে সবসময় চারিদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মৌচাকের কিছু অংশ রেখে কাটতে বলা হয়েছে। মৌচাকের যে স্থানে ডিম থাকে সেখান থেকে কিছুটা রেখে বাকী অংশ কাটলে মৌমাছি বাড়বে ও মৌচাকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। মৌয়ালরা মধুও বেশি পাবে।