শনিবার || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
চিকিৎসা ও আশ্রয়ের জন্য কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন!
প্রকাশিতঃ ১১ নভেম্বর ২০২৪, সোম, ১১:০৭ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৪ বার।
বিষের বোতল ব্যাগে নিয়ে রাজধানী ঢাকার পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসহায় এক মা ও তার অসুস্থ ছেলে। তাদের জীবনের হৃদয়বিদারক গল্প হার মানাবে যে কোনো সিনেমাকেও। গত ২০ দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে এক কাপড়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরছেন মা ও ছেলে।
মা-ছেলের ব্যয়বহুল চিকিৎসা আর ছোট্ট একটু আশ্রয়ের আশায় তারা দিয়েছেন কিডনি বিক্রি করে দেয়ার বিজ্ঞাপন। আর সেই বিজ্ঞাপনের সূত্রেই মা ছেলের খোঁজ পায় একাত্তর।
কারওয়ান বাজার মেট্রোরেলের দেয়ালে লাগানো কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন অনেকেরই নজর কেড়েছে। সেই বিজ্ঞাপনে দেয়া যাচ্ছে, কেউ একজন ফোন নম্বর দিয়ে রীতিমতো দুটি কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।
কিন্তু কেন? সত্যিই কি এভাবে কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়? নাকি এর পেছনে কোন রহস্য রয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একাত্তরের এই প্রতিবেদক ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করে সেই নম্বরে।
এক নারী কণ্ঠ নিজের পরিচয় দেন শেলি খানম নামে। তিনি জানান, দুটি কিডনি বিক্রি হবে। একটি তার আর অন্যটি ছেলের। দাম চাইলেন তিন কোটি টাকা। এবার তার সাথে সরাসরি কথা কলা আগ্রহ দেখায় একাত্তর।
কথা মতো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে কিডনির ক্রেতা সেজে শেলি খানমের মুখোমুখি হয় এই প্রতিবেদক। কেন তিনি নিজের আর আদরের সন্তানের কিডনি বিক্রি করতে চান?
কেনই বা তার এতোটা টাকা প্রয়োজন? এমন প্রশ্নে মুখ খুললের শেলি খানম। বেরিয়ে এলো এক মায়ের এক নীবর যুদ্ধের গল্প। যে যুদ্ধ তার একমাত্র সঙ্গী অসুস্থ ছেলে সাইফুল।
একমাত্র ছেলে সাইফুলকে নিয়ে গেলো ২০ দিন ধরে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মা শেলি। সঙ্গে রেখেছেন একটি বিষের বোতল। এই যুদ্ধে হেরে গেলে মা-ছেলে একসাথে আত্মাহুতি দেবেন বলে ঠিক করেছেন।
এক কাপড়েই কেটে গেছে মা ছেলের ২০ দিন। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন। সামান্য আর্থিক সহায়তা মিলেছে। কিন্তু জীবন বাঁচানোর স্থায়ী কোন সংস্থান মেলেনি।
অথচ ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনে তার ছিলো গোছানো সংসার। বিপত্তির শুরু এক বছর আগে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে। এরপর স্বামীর ঘরে আর ঠাই হয়নি। ঢাকায় এসে আশ্রয় নেন মেয়ের বাসায়।
৯ মাস মেয়ের আশ্রয়ে ছিলেন। মেয়ের সংসারের স্বার্থে সেখান থেকেও বিদায় নিতে হয়। এবার যান ভাতিজির বাসায়। কয়েকদিন পর সেই আশ্রয়টাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই ঢাকার রাস্তায় ঘুরছেন মা ছেলে।
দিনে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান মা-ছেলে। আর, রাতে শাহবাগের সাবেক পিজি হাসপাতালের বারান্দায়। অসুস্থ ছেলের নাকে অপারেশন দরকার। তাও নাকি দেশে সম্ভব নয়।
নিজের অসুস্থতা, ছেলের নাকের ব্যয়বহুল চিকিৎসা, শেষ বয়সে একটা নিশ্চিত আশ্রয়। সব মিলে কোন উপায় না পেয়েই কিডনি বিক্রির চিন্তা। যদিও দেশের আইনে এভাবে কিডনি বিক্রি করা বেআইনি।
কিন্তু কি করছেন শেলি খানম? কোথায় যাবেন অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে? এই প্রশ্নের কোন উত্তর মেলেনা। — একাত্তরtv