ভূমিদস্যুদের হামলায় ভূমিহীন নেতা কামরুল নিহত, আহত ২০, আটক ৬
Image

মঙ্গলবার || ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ভূমিদস্যুদের হামলায় ভূমিহীন নেতা কামরুল নিহত, আহত ২০, আটক ৬

প্রকাশিতঃ ১ নভেম্বর ২০২৪, শুক্র, ১০:৪০ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১২১ বার।

ভূমিদস্যুদের হামলায় ভূমিহীন নেতা কামরুল নিহত, আহত ২০, আটক ৬

অভিযান পরিচালনা শেষে ভূমিদস্যু আরিজুল ইসলাম ও গোলাম ফারুক বাবুর নেতৃত্বে ভূমিহীন নেতা কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা ও ২০ জন ভূমিহীন নারী ও পুরুষকে জখম করা হয়েছে। আহত ছয়জনকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে হামলাকারিরা। ছয়জনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কামরুল ইসলাম (৪৮) খলিষাখালী গ্রামের আবু বকর গাজীর ছেলে।

আহতরা হলেন- কালিগঞ্জ উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে রবিউল আউয়াল, একই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে মহরম, আতিয়ার রহমানের স্ত্রী লায়লী খাতুন, সামছুরের স্ত্রী সফুরা খাতুন, আকরামের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন, রাজিয়া খাতুন, ফরিদা খাতুন, পাইকাড়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে হাসিব, কাশিবাটি গ্রামের হাসিদুল হাসান সবুজ, আরিজুল ইসলাম, নুরুজ্জামান ওআশাশুনির শ্রীকলস গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে সোহেল রানা।

নিহত কামরুল ইসলামের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন জানান, জাল জালিয়াতের মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরী করে দেবহাটার শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, সখিপুরের আব্দুল আজিজ ও একই এলাকার বেসরকারি সংস্থা আইডিয়ালের পরিচালক নজরুল ইসলাম, পারুলিয়ার ইকবাল মাসুদ সহ বেশ কয়েকজন ভূমিদস্যূ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চণ্ডিচরণ ঘোষের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দখল করে আসছিলো। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই জমি লাওয়ারিশ হিসাবে ঘোষনা করে। এরপর ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে সাপমারা খালের দুই ধার থেকে উচ্ছেদ হওয়া প্রায় ৮০০ পরিবার সেখানে বসবাস করে আসছিলো। এই আদেশের বিরুদ্ধে জমির মালিক দাবিদাররা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে সিভিল রিভিউ পিটিশন দাখিল করলে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওই রিভিশন খারিজ করে দেন। এরপরও তারা নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিজুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, পারুলিয়ার চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, নওয়াপাড়ার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম সহ একটি স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে সমঝোতা করে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার জন্য দফায় দফায় হামলা চালিয়ে আসছিলো।

এই বিষয়ে ভূমিহীনরা গত ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক, এসপি ও সেনা ক্যাম্পে স্মারকলিপি দেয়। এরপরও সেনাবাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে খলিষাখালিতে অভিযান পরিচালনা শেষে চেয়ারম্যান আরিজুল, গোলাম ফারুক বাবু, আইডিয়ালের নজরুল, সুরুজ কাজী, মাছ আনারুল ও ইকবাল মাসুদের নেতৃত্বে ভূমিহীনদের উপর হামলা চালানো হয়। হামলায় ভূমিহীন নেতা কামরুল ইসলাম নিহত হন। তিনিসহ কমপক্ষে ২০ জন নারী ও পুরুষ ভূমিহীন জখম হন। আহত ছয়জন ভূমিহীনকে হামলাকারিরা তাদের মজুত করা অস্ত্র দিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মাদ সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলে সাংবাদিকদের জানান, খলিষাখালীতে ১ হাজার ৩১৮ বিঘা ঘের নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ বিরাজ করছিল। ওই লাওয়ারিশ জমি দখলে রেখেছিল কামরুল, নূরুজ্জামান, সোহেল রানাসহ একাধিক ব্যক্তি। ৫ আগস্টের পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি হওয়ার সুযোগে খলিষাখালীতে ঘের দখল করে মহড়া দিতে থাকে। তাতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে খলিষাখালিতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে ১৫ টি হাত বোমা, ৩০টি ছোট হাতবোমাসহ বিভিন্ন দেশী অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ৬ জনকে।

এসময় স্থানীয়দের পিটুনিতে কামরুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়। চিকিৎসার জন্য তাকে সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।