Dakhinadarpon যশোরেশ্বরী দেবী ও প্রসঙ্গ কথা – Dakhinadarpon
Image

সোমবার || ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

যশোরেশ্বরী দেবী ও প্রসঙ্গ কথা

প্রকাশিতঃ ৩০ অক্টোবর ২০২৪, বুধ, ১১:৩৪ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ৪৮ বার।

যশোরেশ্বরী দেবী ও প্রসঙ্গ কথা

যশোরেশ্বরী কালী দেবী লোকজ বিশ্বাসের ভিত্তিতে ভারতবর্ষের প্রাচীন, প্রসিদ্ধ পীঠদেবী এবং স্থানটি পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন কীর্তিস্থান।

এ মন্দির থেকে গত কিছু দিন আগে চুরি হয়ে যাওয়া যশোরেশ্বরী কালীমাতার সোনার মুকুট উদ্ধার হওয়া এবং মন্দিরের মর্যাদা সমুন্নত রাখার দায়িত্ব স্থানীয় সকল শ্রেণীর মানুষের। সম্প্রতি কিছু লোক এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি সার্বজনীনভাবে পরিচালনার প্রসঙ্গ তুলে মানুষের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের চেষ্টা করছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে, যা নিরসন হওয়া দরকার। সে বিষয়ে কিছু জ্ঞাতব্য তথ্য উপস্থাপন করা হলো।

যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের অবস্থান বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। লোকমূখে প্রচলন যশোরেশ্বরীপুর। মধ্যযুগীয় সভ্যতার পর অষ্টাদশ শতকে বৃটিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কালে এ জনপদে ফের জনবসতি গড়ে ওঠে। এ সময় যশোরেশ্বরী দেবীর কালীমন্দিরসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা (অতিথিশালা, নহবতখানা, নাটমন্দিরসহ অন্যান্য স্থাপনা যা ভগ্ন অবস্থায় আজও দাঁড়িয়ে আছে) পুনঃনির্মাণ করেন মন্দিরের বর্তমান সেবাইত (রক্ষণাবেক্ষণকারি) দেশের খ্যাতিমান আবৃত্তি শিল্পী, সংস্কৃতিজন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়গণের পূর্বপুরুষ জয়কৃষ্ণ-এঁর চতুর্থ অধঃস্তন বলরাম চট্টোপাধ্যায়। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে এই কালীকাপুরী নির্মাণ করেন।

তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র কালীকিঙ্কর ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরে যে লিপিতত্ত্ব খোদাই করেন সেটি নি¤œরূপ;
“বঙ্গাব্দ বারো’শ ষােল সাল পরিমান
শ্রী মহা কালীকাপুরী করিয়া সুনির্মাণ।
চৈতালীয় চট্টোবংশ পূরন্দর সন্তান।
ক্ষিতিসুর বলরাম মহামতিমান,
যে কিছু বিষয় সেবা অধর্মের অপিএ।
আনন্দে আনন্দ থামে আইন বসিএ,
তাহার জ্যৈষ্টের সুত শ্রী কালীকিঙ্কর,
বারো শ’ একান্ন সালে লিপিতত্ত্বপর।” (তথ্য সুত্র: যশোহর খুলনার ইতিহাস ২য় খন্ড পৃষ্ঠা-২৮৫)

দেবত্ত্বোর সত্ত্বের অধিকারী হিসেবে বংশপরম্পরায় মন্দির নির্মাণ, সংস্করণ, সংরক্ষণ এবং পূজা-পার্বণের দায়িত্ব করে চলেছেন তাঁরা। সুতরাং এই ঐতিহাসিক মন্দিরের সত্ত্ব এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ভেদবিভেদ সৃষ্টির অবকাশ বর্তমানে আছে বলে মনে করি না।

অত্যন্ত দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় সম্পপ্রতি এই ঐতিহ্যবাহী যশোরেশ্বরী কালী মাতার মাথার সোনার মুকুট চুরি হয়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় হিন্দু মুসলিম সকলেই দায়িত্ব ওই মুকুট উদ্ধার করা। ঈশ্বরীপুরের সরদারগণ (কিনু সরদার, সাবেক চেয়ারম্যান, মহসীন সরদার, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এঁর পূর্বপুরুষগণ) আদি বসতি স্থাপনকারী। তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শে জয়কৃষ্ণ বিপ্রগণ এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন ও মন্দির নির্মাণ করেন।

ঐতিহাসিক পীঠস্থান খ্যাত এই মন্দিরে প্রতিবছর কার্ত্তিকী অমাবস্যার দীপাবলি রাতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে যশোরেশ্বরী কালী মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সময়ে উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবর্গ, দেশ-বিদেশের তীর্থাথী, পর্যটক, জিজ্ঞাষু, ভ্রমন পিপাষু মানুষের আগমন ঘটে এই প্রসিদ্ধ যশোরেশ্বরী মন্দিরে। মানুষের মুখেমুখে ঈশ্বরীপুর-শ্যামনগর-সাতক্ষীরর নাম উচ্চারিত হয়।

অতএব দ্বেষ-বিদ্বেষ, হিন্দু-মুসলিম বিভেদ ভুলে যশোরেশ্বরী’র মর্যদা অক্ষুণœ রাখায় সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।