রবিবার || ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
সাতক্ষীরার তালায় সুদখোর খালেক কর্তৃক দুই দফা ধর্ষণ মামলার ভয়ে ধর্ষণের পর পানিতে ডুবিয়ে অর্পিতাকে হত্যা!
প্রকাশিতঃ ১৫ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গল, ১১:৩৭ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৭১ বার।
সুদের টাকা না পেয়ে এক গৃহবধুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে জানতে পেরে গভীর রাতে ওই গৃহবধু প্রকৃতির ডাকে সাড়া নিয়ে বাইরে এলে তাকে আবারো ধর্ষণের পর নদীর পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে গলায় ওড়না পেচিয়ে পেয়ারা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে পুলিশ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিশখালি ইউনিয়নের পার কৈখালি গ্রাম থেকে পুলিশ ওই গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে।
নিহত গৃহবধুর নাম অর্পিতা বাছাড় (৪৬)। তিনি পার কৈখালি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পরিমল বাছাড়ের স্ত্রী।
পার কৈখালি গ্রামের মৃত পদ্ম চরণ বাছাড়ের ছেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পরিমল কুমার বাছাড় জানান, পার্শ্ববর্তী টিকারামপুর গ্রামের নৈমদ্দিন মোড়লের ছেলে দবিরউদ্দিন মোড়লের কাছ থেকে জমি লীজ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ চিংড়ি ঘের করে আসছিলেন। করোনাকালিন সময়ে তিনি মাছ চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হন। একপর্যায়ে তিনি মাছ চাষ বন্ধ করে মালিককে জমি ফিরিয়ে দেন। তবে জমির মালিক দবিরউদ্দিন শ্যালো মেশিন ও বোরিং বাবদ টাকা ফিরিয়ে দিলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে মৌখিক চুক্তি থাকে। তবে জাগরনী চক্র, ব্যুরো ও সোনালী ব্যাংকসহ কয়েকজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তা ঠিকমত পরিশোধ করতে না পেরে তাকে অনকে সময় পালিয়ে বেড়াতে হয়।
পরিমল কুমার বাছাড় আরো জানান, ২০০৮ সালে চিংড়ি চাষের জন্য তিনি টিকেরামপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ সরদারের ছেলে সুদখোর আব্দুল খালেকের কাছ থেকে বছরে ৪৫ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে দেড় লাখ টাকা ধার নেন। বর্তমানে সে ছয় হাজার টাকা পাবে। এ ছাড়া দু’ বছরের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া ও তিন বছর ওই বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেওয়ার শর্তে গত বছরের আগষ্ট মাসে তার বসতবাড়ির ৪ দশমিক ৬৬ শতকের মধ্যে চার শতক জমি পাঁচ লাখ টাকায় খালেক সরদারের কাছে বিক্রি করেন। আপত্তি স্বত্বেও খালেক নয় মাস আগে এক ভাড়াটিয়া বসায়। আগামি জৈষ্ঠ্য মাসের মধ্যে জমি ফিরিয়ে না নিলে ঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে বলে তার স্ত্রী অর্পিতাকে হুমকি দিয়ে যায় খালেক। তবে দবিরউদ্দিনের পাওনা ৫০ হাজার টাকা ও খালেকের পাওনা ছয় হাজার টাকা নিতে তারা দু’জনে একত্রে মাঝে মাঝে তােিদর বাড়িতে আসতো। তিনি (পরিমল) বাড়িতে না থাকা ও ছোট মেয়ে কলেজ হোস্টেলে থাকার সুযোগে গত ২৫ জুলাই রাতে তার স্ত্রীকে দরজা খুলতে বাধ্য করে ধর্ষণ করে খালেক।
বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ বা জানাজানি করলে অভাবের কারণে দিনমজুর খাটা অর্পিতা ঘর ছাড়া করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিষয়টি গোপন রাখেন। খালেকের চলাফেরা সন্দেহ হওয়ায় গত ২ আগষ্ট বুধবার বিকেলে খালেক বকেয়া ছয় হাজার টাকা নিতে চারবার দবিরউদ্দিনকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসলে ও তাকে বারবার বাইরে যাওয়ার তাগিদ দিলে তার সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তিনি কৌশলে ঘরের পিছনে আত্মগোপন করলে খালেক রাত পৌনে নয়টার দিকে তার ঘরে ঢুকে স্ত্রী অর্পিতার জোর আপত্তি থাকার পরও ধর্ষণ করে। বিষয়টি তিনি জানালা দিয়ে দেখে ফেললে দৌড়ে ঘরে এসে খালেককে ধরে ফেলার চেষ্টা করলে তাকে ঘর ছাড়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করার উদ্যোগ নিলে বাধা দেয় দবিরউদ্দিন। মীমাংসা করার কথা বলে দবিরউদ্দিন কৌশলে খালেককে বাঁচানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ১৩ আগষ্ট রবিবার দলুয়া বাজারে এক জনের কাছে সোনার গহনা বন্ধক রেখে ৫ হাজার টাকা যোগাড় করে পরদিন স্ত্রীকে দিয়ে কাদাকাটির অ্যাড. জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে আদালতে মামলা করানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আদালতে মামলা লেখার সুবিধার্থে সে আইনজীবীর কাছে তার ধর্ষণের দুটি তারিখ লেখাসহ ঘটনার বর্ণনা লিখে দেয় অর্পিতা। বিষয়টি জানাজানি হয়।
রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সস্ত্রীক ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। স্ত্রী কিছুক্ষণ পর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাইরে যায়। রাত একটা ৩৪ মিনিটে তার ঘুম ভেঙে গেলে তিনি তার পাশে স্ত্রীকে না দেখতে পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুুঁজি করেন। একপর্যায়ে সোমবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে তার বাড়ির পাশে পেয়ারা গাছের ডালে সায়া ও বøাউজ ভেজা অবস্থায় গলায় সিনথেটিক ওড়না পেচানো অর্পিতাকে ঝুলতে দেখেন। পরে বাড়ির পাশে দলুয়া নদীর ধারে কুমড়ার মাচানের নীচে অর্ধেক মাটি ভর্তি একটি টিনের কলসের পাশে অর্পিতার পরিহিত শুকনা শাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া কালীমন্দিরের পাশে ঘাসের উপর ধ্বস্তাধ্বস্তি করা হয়েছে এমন চিহ্ন দেখা যায়। লাশের গায়ে হাত দিয়ে বরফের মত ঠাÐা মনে হয়। ওড়না কেটে অর্পিতার লাশ নামিয়ে ঘরের বারান্দায় নিয়ে গেলে পেটিকোটে কাদা মাখানো দেখা যায়। পেটে চাপ দিলে কিছুটা জল বের হয়। মামলার হাত থেকে বাঁচতে দবিরউদ্দিনের সহযোগিতায় খালেক তার স্ত্রীকে রাতে বাড়ির উঠান থেকে তুলে এনে আবারো ধর্ষণের পর নদীর জলে ডুবিয়ে হত্যা করেছে বলে তিনি প্রাথমিকভাবে মনে করছেন। পরে টিনের কলসির ভিতর কাদা ভর্তি করে অর্পিতার গলায় ঝুলিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে গলায় ওড়না পেচিয়ে পেয়ারা গাছের ডালে ঝুলিয়ে আত্মহত্য্রা প্রচার দেওয়া হয়।
তবে তিনি থানার এজাহারে ধর্ষণের পর হত্যা সম্পর্কিত মামলা দিতে চাইলেও পুলিশের পরামর্শ মত তিনি ধর্ষণের পর লজ্জায় অর্পিতা আত্মহত্যা করেছে মর্মে উল্লেখ করেছেন।
এ ব্যাপারে দবিরউদ্দিন মোড়ল বলেন, খালেক ২ আগষ্ট বুধবার রাতে অর্পিতাকে ধর্ষণ করেছে মর্মে তার ও মোকছেদের কাছে স্বীকার করেছে। তবে তিনি বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও খালেক পরে এড়িয়ে গেছে। তবে তিনি অর্পিতার মৃত্যুর বিষয়ে কিছু জানেন না।
এ ব্যাপারে খালেক সরদারের সঙ্গে তার০১৭২৭-০৩৯৫৬৭ নং মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে সোমবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ময়না তদন্তের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক তথ্য গোপন রাখার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, অর্পিতাকে ধর্ষণের পর পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পাটকেলঘাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী জানান, অর্পিতা বাছাড়কে ধর্ষণের পর আত্মহত্য্ াকরতে বাধ্য করা হয়েছে তার স্বামী পরিমল বাছাড়ের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার থানায় খালেক ও দবিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মৃত ও মতের স্বামীর মোবাইল জব্দ করে তাদের কথাবার্তা যাঁচাই করা হবে। উদ্ধার হওয়া মৃতার নিজ হাতে লেখা একটি চিঠি থেকে তাকে খালেক ২৫ জুলাই ও ২ আগষ্ট দুই বার ধর্ষণ করেছে মর্মে উল্লেখ আছে।