শনিবার || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
গুজরাট হাইকোর্টের রায় মোদির ডিগ্রি জানতে চেয়ে জরিমানা কেজরিওয়ালের
প্রকাশিতঃ ১ এপ্রিল ২০২৩, শনি, ১:০৬ পূর্বাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ৪৬৭ বার।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেখাতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে সেই তথ্য দাখিলের প্রয়োজন নেই। গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি বীরেন বৈষ্ণব আজ শুক্রবার এই রায় দিয়েছেন। আর মোদির ডিগ্রি জানতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন পেশের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ২৫ হাজার রুপি জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে ওই অর্থ জমা দিতে হবে।
আদালতের এই রায়ে বিস্ময় প্রকাশ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদিম পার্টির (এএপি) প্রধান কেজরিওয়াল টুইট করেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কত দূর পড়াশোনা করেছেন, তা জানার অধিকারও কি দেশবাসীর নেই? এসব কী চলছে? অশিক্ষিত অথবা অল্প শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী দেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
মামলাটি সাত বছরের পুরোনো। ২০১৬ সালে তথ্য জানার অধিকার আইনের প্রয়োগ মারফত প্রধানমন্ত্রী মোদির কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দাখিলের আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদনের সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়ালও জড়িয়ে পড়েছিলেন। কারণ, তিনি কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনকে (সিআইসি) বলেছিলেন, ভোটার পরিচয়পত্রসংক্রান্ত সব তথ্য তিনি দিতে প্রস্তুত, তবে সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকেও বলা উচিত তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ দাখিল করতে।
কেজরিওয়াল সিআইসির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন তখন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে নরেন্দ্র মোদির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দাখিল করার নির্দেশ দেয়। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে গুজরাট হাইকোর্টে মামলা করে। গত মাসে সেই মামলার শুনানি শেষ হয়। শুক্রবার মামলার রায় দেন বিচারপতি বীরেন বৈষ্ণব।
নরেন্দ্র মোদির দাবি, তিনি ১৯৭৮ সালে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে।
মামলায় গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা হাইকোর্টকে বলেছিলেন, লুকানোর কিছুই নেই। কিন্তু গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে তথ্য জানাতে বাধ্য করা যায় না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী জনপ্রতিনিধি। সেই দায়িত্ব পালনের সঙ্গে ডিগ্রি পেশের কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গেলেই ডিগ্রি পাওয়া যাবে।
সলিসিটর জেনারেলের যুক্তি ছিল, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পিএইচডি ডিগ্রিধারী নাকি অশিক্ষিত, তাতে গণতন্ত্রে কিছু আসে–যায় না। এই ক্ষেত্রে কোনো জনস্বার্থও জড়িত নয়। তা ছাড়া এতে তাঁর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
তুষার মেহতা এই যুক্তিও দিয়েছিলেন, ‘কারও শিশুসুলভ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আগ্রহ মেটানোর জন্য তথ্য দাখিল করতে বলা যায় না। তা ছাড়া এই তথ্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রতিনিধিত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। একমাত্র জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্যই এই আইন অনুসারে দাখিল করা যেতে পারে।’
উদাহরণ দিয়ে সলিসিটর জেনারেল বলেছিলেন, ‘আমি কী দিয়ে নাশতা করেছি, তা জানার অধিকার সবার নেই। কিন্তু নাশতার জন্য আমি কত খরচ করেছি, তা জানতে চাওয়া যায়।’
গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিসিটর জেনারেলের যুক্তি খারিজ করে কেজরিওয়ালের আইনজীবী পারসি কাভিনা আদালতকে জানিয়েছিলেন, ‘এই আগ্রহ মোটেই শিশুসুলভ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়। ভোটের প্রার্থী পদ জমা দেওয়ার সময় তিনি (মোদি) তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার উল্লেখ করেছিলেন। আমরা সেই প্রশংসাপত্রই দেখতে চাই। তাঁর মার্কশিট দেখতে চাইনি।’ তিনি বলেন, সলিসিটর জেনারেল দাবি করলেও নরেন্দ্র মোদির ডিগ্রি সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোথাও পাওয়া যায়নি। ওই তথ্য জনসমক্ষে নেই।
গত বৃহস্পতিবার থেকে আম আদমি পার্টি ভারতজুড়ে ‘মোদি হটাও দেশ বাঁচাও’ প্রচার শুরু করেছে। হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, তেলুগু, ওড়িয়া, কান্নাড়া, মালয়ালম, মারাঠিসহ মোট ১১ ভাষায় পোস্টার ছাপিয়ে সারা দেশে আন্দোলন শুরু করেছে তারা। গুজরাটে এ জন্য আপ কর্মীদের ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে দলের মিডিয়া কো–অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান নবাব নাসির আমন বৃহস্পতিবার মোদিকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘একজন অশিক্ষিত মানুষ দেশ চালাতে পারেন না। নীতি নির্ধারণের জন্য, ঘৃণা ছড়ানো বন্ধের জন্য শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজন।’গুজরাট হাইকোর্টের এই রায়ের পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য চলছে। আদালতের রায় জুড়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালও তাঁর টুইটে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কত দূর পড়াশোনা করেছেন, তা জানার অধিকারও কি দেশবাসীর নেই? আদালতে উনি ডিগ্রি দেখানোর জবরদস্ত বিরোধিতা করে গেলেন। কেন? অথচ তাঁর ডিগ্রি যাঁরা দেখতে চাইলেন, তাঁদের জরিমানা করা হলো? এসব হচ্ছেটা কী?’ দলের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার যে মন্তব্য করা হয়েছিল, শুক্রবার করা টুইটের শেষে কেজরিওয়ালও সেই মন্তব্য করে বলেন, ‘অশিক্ষিত কিংবা অল্প শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী দেশের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক।’