রবিবার || ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ভারতীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির মদিনা সফর নিয়ে এত আলোচনা কেন?
প্রকাশিতঃ ১১ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহঃ, ১০:০১ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৪১ বার।
ভারতের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং এখন দেশটির সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির দুই দিনের সৌদি আরব সফর নিয়ে এই মূহুর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে।
এ সফরকে তার ঐতিহাসিক মদিনা সফর বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, যার অংশ হিসেবে তিনি মসজিদ-এ-নববী, জাবাল-ই-উহুদ এবং মুসলিমদের প্রধান ইবাদতখানা হিসেবে পরিচিত মসজিদ এ-কাবা পরিদর্শন করেছেন।
টুইটারে এক বার্তায় এই সফরের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্মৃতি ইরানি বলেছেন, এ সফর ভারত এবং সৌদি আরবের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্কের প্রতিফলন।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোন অমুসলিম প্রতিনিধিদলকে মদিনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
সৌদি আরবের পর্যটন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট ‘ভিজিট সৌদি’র তথ্য অনুযায়ী, কোন অমুসলিম মক্কা এবং মদিনার পবিত্র মসজিদে (মসজিদ-এ-নববী এবং মসজিদ আল-হারাম) প্রবেশ করতে পারে না।
কিন্তু এসব মসজিদের আশপাশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
ভারতের সংখ্যালঘু সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দুই দিনের সরকারি সফরে গত সোমবার আটই জানুয়ারি সৌদি আরবে যান। তার এই সফর ভারতের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক উন্নয়নের কূটনৈতিক মিশনের অংশ।
তার সাথে সফরসঙ্গী হিসেবে একটি প্রতিনিধিদল ছাড়াও ভারতের জুনিয়র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভি মুরালিধরনও রয়েছেন। জেদ্দায় অবতরণের পর ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি মদিনায় যায়।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই সফরে স্মৃতি ইরানি ২০২৪ সালের হজ সম্পর্কিত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সই করেছেন। চুক্তির আওতায় ২০২৪ সালের হজের সময় ভারত থেকে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার ২৫ জন হাজী হজ করতে সৌদি আরবে যেতে পারবেন।
স্মৃতি ইরানি ভারতীয় হজ যাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে হজ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। একইসাথে তিনি ওমরা পালন করতে যাওয়া ভারতীয় নাগরিকদের সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন।
এছাড়া তিনি সৌদি আরবে বসবাস করা ভারতীয় নাগরিক এবং সেখানে থাকা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথেও দেখা করেছেন।
দিল্লিতে থাকা বিবিসির সংবাদদাতা শাকিল আখতারের মতে, ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো ভারতে বড় আকারের বিনিয়োগ করছে। এছাড়া সৌদি আরবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৫ লাখের মতো ভারতীয় নাগরিক কর্মরত রয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে মদিনায় স্মৃতি ইরানির অভ্যর্থনাকে অসাধারণ এবং ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভারতের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দূরদর্শনের খবরে বলা হয়, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ভি মুরালিধরন সৌদি আরবের মদিনায় এক ঐতিহাসিক সফরে রয়েছেন।”
দূরদর্শনের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘প্রথমবারের মতো একটি অমুসলিম প্রতিনিধিদলকে মদিনায় স্বাগত জানানো হয়েছে। এটা ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে অসাধারণ সম্পর্কের প্রতিফলন।’
স্মৃতি ইরানি মদিনায় থাকার সময় মসজিদ এ-নববীর আশেপাশের বিভিন্ন ছবি টুইট করেছেন। ভারতীয় এই প্রতিনিধিদলটি উহুদ পর্বত এবং মসজিদ-এ কাবাও পরিদর্শন করেছে।
দেশটির গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, স্মৃতি ইরানির এই সফর দুই দেশের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বাড়াবে।
সৌদি আরবে অমুসলিমরা কোথায় যেতে পারে না?
সৌদি আরবের পর্যটন বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ভিজিট সৌদি’ পর্যটক ভিসাধারীদের জন্য একটি বার্তা প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘মক্কা ও মদিনার পবিত্র শহরগুলো শুধুমাত্র মুসলিম পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত’। এই শহরগুলোতে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম হাজী সফর করে থাকেন।
সৌদি আরবে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মক্কা ও মদিনার কেন্দ্রীয় শহরে ধর্মীয় স্থানগুলোতে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সৌদি সরকার।
কিন্তু ‘ভিজিট সৌদি’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ দুটি পবিত্র শহরের মাঝামাঝি এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেগুলো স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে জড়িত এবং সেগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
সৌদি আরবের ভি ভিসা (অভিবাসন সম্পর্কিত নয় এমন নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, অমুসলিমদের মদিনায় ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও, মসজিদ-এ-নববীর পবিত্রতা রক্ষায় মসজিদ ও তার প্রাঙ্গণে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, অমুসলিমরা সাধারণত সৌদি আরবের ধর্মীয় স্থানগুলো যেমন মসজিদে প্রবেশ করতে পারে না, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, অমুসলিমরা মক্কার প্রধান মসজিদের বাইরের এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে, কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি তাদেরকে দেয়া হয়নি।
সেক্ষেত্রে ধর্মীয় কোন স্থানে ভ্রমণ করার পরিকল্পনার আগে, সে স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও শর্তাদি আগে থেকে জেনে নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
সৌদি আরবে থাকা যুক্তরাষ্ট্র মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৩০শে মে একজন ইসরায়েলি ইহুদি সাংবাদিককে মক্কায় প্রবেশে সহায়তা করার অভিযোগে ২৩শে জুলাই মক্কা পুলিশ একজন সৌদি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে।
এতে বলা হয়, এটি ‘মক্কায় অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে করা আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের’ অভিযোগ।
এরআগে, ১৮ই জুলাই ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যম চ্যানেল থার্টিন নিউজ ১০ মিনিটের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায় যে, একজন সাংবাদিক মসজিদ আল-হারামের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন এবং তিনি আরাফাত পর্বত বেয়ে উঠছেন।
আমেরিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, “ওই ঘটনায় মুসলিম এবং সৌদি নাগরিকরা অনলাইনে ক্ষোভ প্রকাশ করে।”
“আইন লঙ্ঘনকারী যে জাতীয়তার হোক না কেন এবং সে যে কাজেই নিয়োজিত থাকুক না কেন।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা সৌদি আরবে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সফর নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন।
পাকিস্তানি একজন ব্যবহারকারী কিরণ ভাট এই বিষয়টিকে ভারত এবং সৌদি আরবের মধ্যকার কূটনীতিক সম্পর্কের নতুন উচ্চতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, কিছু কিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী মদিনায় তাদের অবস্থানের বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন।
অনেকে হিজাব না পরে শাড়ি পরার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
একই সাথে, অনেকে মন্তব্য করার সময় অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন মদিনায় প্রবেশ করতে দেয়া হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে, অনেক ব্যবহারকারী স্মৃতি ইরানির এই সফরের প্রশংসা করেছেন।