
রবিবার || ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ || ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ || ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ধরমশালার মাঠের ঘাসে ফাঙ্গাস, লিটনের ‘রাফ প্যাচ’
প্রকাশিতঃ ৯ অক্টোবর ২০২৩, সোম, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ৬৯ বার।

মাত্র দু’দিন আগেও এ মাঠের ঝলমলে সবুজ স্পোর্টিং উইকেটের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ফিরছিল সবার মুখে মুখে। আর এখন সেই বাইশ গজের বাইরে মাঠটার যে আউটফিল্ড, তার সমালোচনায় যেন কান পাতাই দায়!
ধরমশালার আউটফিল্ডে বহু জায়গায় চাপড়া চাপড়া ঘাস উঠে গিয়ে বালি বেরিয়ে পড়িয়েছে, আর সেখানে ফিল্ডিং করতে গিয়ে খেলোয়াড়রা বড়সড় চোট পেতে পারেন – এই খবরও বিশ্বকাপে রাষ্ট্র হয়ে গেছে।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার যেমন শুধু বলতে বাকি রাখলেন, এ মাঠ খেলার অযোগ্য।
সোমবার প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে বাটলার অবশ্য সরাসরি জানালেন, এই আউটফিল্ডকে ‘আইডিয়াল’ বলা যাবে না কিছুতেই।
“ফিল্ডিং করার সময়, ডাইভ দেওয়ার সময় যে খুব সাবধানে সেটা করতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না”, বললেন বাটলার।
আরও একধাপ এগিয়ে বিবিসিকে তিনি তো বলেই ফেলেছেন, কালকের ম্যাচে তিনি ফিল্ডারদের মোটেই ডাইভ করতে বলবেন না!
শনিবারের ম্যাচের পর আইসিসি-ও ধরমশালার আউটফিল্ডকে ‘অ্যাভারেজ’ বা ‘গড়পড়তা’ বলে রায় দিয়েছে – মানে বলা যেতে পারে টেনেটুনে পাশ করেছে এই স্টেডিয়াম।
বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলেনে এসেছিলেন দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ – তাকে দিয়ে অবশ্য কিছুতেই আউটফিল্ডের সমালোচনা করানো গেল না।
অনেক চাপাচাপিতে হেরাথ শুধু এটুকুই বললেন, “আইসিসি এই মাঠের ওপর অনেক কাজ করেছে, এই মাঠকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে।“
সোজা কথায়, বাংলাদেশ দলের অবস্থান হল আইসিসি যদি ধরমশালার আউটফিল্ডকে খেলার ছাড়পত্র দিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সেখানে খেলতে অসুবিধা কোথায়?
এই আউটফিল্ড বিতর্কের পটভূমিতেই ধরমশালাতে মঙ্গলবার বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড।
যদি কোনও কারণে মাঠ বা আউটফিল্ড খেলার অনুপযুক্ত হয়, তাহলে দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি হবে বলেই টুর্নামেন্টের নিয়ম বলছে – মানে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড উভয় দলই এক পয়েন্ট করে পাবে।
তবে ধরমশালায় কালকের ম্যাচ খেলানোই যাবে না, ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ বা আইসিসি কর্মকর্তারা কেউই এখনো সেরবকম কোনও আভাস দেননি।
ধরমশালার ‘ঘাস রহস্য’
কিন্তু ধরমশালায় এত অসাধারণ একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম বানানোর পরও ‘জঘন্য’ আউটফিল্ড কেন হিমাচল ক্রিকেটকে এত ভোগাচ্ছে?
বস্তুত গত মার্চ মাসেও এই মাঠে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে টেস্ট ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল – কিন্তু মাঠের একই ধরনের সমস্যার কারণে সেই ম্যাচ শেষ মুহুর্তে ইন্দোরে সরিয়ে নিতে হয়েছিল।
হিমাচল ক্রিকেটের সিনিয়র কর্মকর্তা বিনীত শর্মা বলছিলেন, আসলে ধরমশালার মাঠে যে বিশেষ ধরনের এক প্রকার ঘাস বা ‘রাইগ্রাস’ ব্যবহার করা হয়েছে – সেটাই এই সমস্যার মূলে।
ধরমশালা আসলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, পৃথিবীর আর কোথাও এত উঁচুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয় না।
কিন্তু এখানে মারাত্মক ঠান্ডা পড়ে বলে মাঠে সাধারণ ঘাস, যা ঠান্ডায় খুব সহজেই শুকিয়ে যায়, তা ব্যবহার না-করে রাইগ্রাস নামে বিশেষ ধরনের ঘাস লাগানো হয়েছে।
বিনীত শর্মা বলছিলেন, “এই রাইগ্রাসের আবার সমস্যা হল এটি খুব সহজেই ফাঙ্গাস বা ছত্রাকে আক্রান্ত হয়।“
“তখন আবার সেই ঘাস হলদেটে হয়ে নিচের চাপড়া চাপড়া বালি বা মাটি বেরিয়ে পড়ে”, জানাচ্ছেন তিনি।
গত শনিবার বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের ম্যাচের সময় এরকম একটা প্যাচেই ফিল্ডিং করতে গিয়ে বড়সড় চোটের ঝুঁকির মুখে পড়েছিলেন আফগান ক্রিকেটার মুজিব উর রহমান।
আফগান দলের হেড কোচ ও সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান জোনাথন ট্রট আবার সে খবর পৌঁছে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে।
ট্রট তাদের জানিয়েছেন, “মুজিব কপালজোরে রক্ষা পেয়ে গেছে। নইলে ডাইভ দিতে গিয়ে হাঁটুতে ও খুব বড় আঘাত পেতে পারত।”
ফলে কালকের (মঙ্গলবার) ম্যাচে বাউন্ডারি বাঁচানোর জন্য দু’পক্ষের কোনও ক্রিকেটারকেই মাঠে ঝাঁপ দিতে দেখা যাবে না – এটা কিন্তু চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।
লিটনের ‘রাফ প্যাচ’
বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে বড় ব্যবধানে প্রথম ম্যাচে জিতেই পরেরটায় কোনও দলই চট করে ‘উইনিং কম্বিনেশন’ ভাঙতে চায় না – বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু শনিবারের তুলনায় কালকের প্রথম এগারোতে একটি পরিবর্তন হলেও হতে পারে, সেটি একজন বাড়তি স্পিনার খেলানো।
সোমবারও যেভাবে উইকেট থেকে ঘাস ছেঁটে ফেলে ধরমশালার পিচকে ন্যাড়া বানানো হল তাতে একজন বাড়তি স্পিনারকে খেলানোর কথা বাংলাদেশ ভাবতেই পারে।
কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহেও সারা দিনে বেশ কয়েকবার এসে পিচ পরীক্ষা করে গেলেন, রঙ্গনা হেরাথকে নিয়ে মাঠের কিউরেটরের সঙ্গেও আলাপ করলেন বেশ খানিকক্ষণ।
ফলে কাল শেখ মাহেদি ও নাসুম আহমেদের মধ্যে একজনের দলে ঢোকার প্রবল সম্ভাবনা থাকছে – আর সে জায়গায় অবধারিতভাবে বাদ পড়বেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
তবে এছাড়া অন্য কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম – যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, খারাপ ফর্ম অব্যাহত থাকলেও ওপেনিং স্লটে লিটন দাস আরও একটি সুযোগ পাচ্ছেন।
বস্তুত বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট যে পুরোপুরি লিটনের পাশে আছে, সেটা এদিন রঙ্গনা হেরাথের প্রেস কনফারেন্সেও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
লিটন দাসকে খেলানোর প্রসঙ্গ উঠতেই বাংলাদেশের স্পিনিং কোচ জানালেন, “লিটনের যেটা চলছে সেটাকেই আমরা বলি ‘রাফ প্যাচ’।“”
“কেরিয়ারে এরকম একটা ফেজ সব ব্যাটসম্যানেরই আসতে পারে, আসেও।”
“রাফ প্যাচ আসতেই পারে, কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হল এই ফেজ থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসা। আমি নিশ্চিত, লিটনও কিন্তু ওখান থেকে খুব স্ট্রং কামব্যাক করবে।”
ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের আসলে কাদের খেলানো উচিত, তা নিয়ে আসলে বিতর্ক চলছে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণারও অনেক আগে থেকেই।
তবে এখন দেখা যাচ্ছে, তামিম ইকবাল স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ার পরও সে বিতর্ক থামেনি – লিটন দাসকে ওপেনার হিসেবে খেলানোর প্রশ্নেও বাংলাদেশ সমর্থকদের মধ্যে দু’রকম রায় দেখা যাচ্ছে।
স্টোকসকে নিয়ে ঝুঁকি নয়
শুধু বিশ্বকাপে খেলার আকর্ষণ এড়াতে পারেননি বলেই এই টুর্নামেন্টের কিছুদিন আগে অবসর ভেঙে আবার ওয়ান-ডে ক্রিকেটে ফিরে এসেছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।
তবে বিশ্বকাপে তার খেলার কথা শুধু চার নম্বরে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে।
কিন্তু ইনজুরির কারণে এখনও বিশ্বকাপে তার একটা ম্যাচও খেলা হয়নি, কাল বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তার মাঠে নামার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
জস বাটলারও জানালেন, “বেন প্র্যাকটিসে জয়েন করছে ঠিকই, ধীরে ধীরে ফুল ফিটনেসের দিকেও এগোচ্ছে।”
“কিন্তু মনে হয় না কালকের ম্যাচে ওকে আমরা পাব বলে!”
বেন স্টোকসের বদলি হিসেবে চার নম্বরে হ্যারি ব্রুক-ও কিন্তু মারকুটে ইনিংস খেলে দলে নিজের জায়গাটা বেশ পোক্ত করে ফেলেছেন।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচেও ব্রুক ১৫ বলে ২৫ রানের ঝোড়ো একটি ইনিংস খেলেছেন। রাচিন রাবিন্দ্রার বলে টানা চতুর্থ বাউন্ডারি মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন তিনি।
কালকের ম্যাচে বাংলাদেশের স্পিনাররা বনাম হ্যারি ব্রুকের লড়াইও তাই জমে উঠতেই পারে।
ইংল্যান্ড তাদের প্রথম এগারোতে মঈন আলিকে বাদ দিয়ে সেই জায়গায় একজন বাড়তি সিমার, রিস টপলি-কে খেলাতে পারে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যখনই ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়, অবধারিতভাবে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ তাদের স্মৃতিতে ফিরে আসবেই।
অ্যাডিলেডের সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক-আউট পর্যায়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ – আর টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গিয়েছিল ইংলিশরা।
সাড়ে আট বছর আগের সেই ম্যাচে দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ, যদিও কাল তাকে খুব সম্ভবত প্রথম এগারোর বাইরেই থাকতে হবে।
এমনিতে ওয়ান-ডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড যে ২ ৪বার মুখোমুখি হয়েছে তার মধ্যে ১৯বারই ইংল্যান্ড জিতেছে।
কিন্তু ধরমশালার কিছুটা ন্যাড়া উইকেটে স্পিনাররা ভাল সাহায্য পেলে বাংলাদেশ যে বাজিমাত করতে পারবে না, তা কে বলতে পারে?
এ জাতীয় আরো সংবাদ

মাঠে-গ্যালারিতে উত্তাপ, যা বললেন মেসি
প্রকাশিতঃ ২২ নভেম্বর ২০২৩, বুধ, ৮:৩৫ অপরাহ্ণ
জিতলো ভারত, টিকিট পেলো বাংলাদেশ
প্রকাশিতঃ ১৩ নভেম্বর ২০২৩, সোম, ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ
ম্যাথিউজের টাইমড আউট বিতর্কে যেভাবে রিঅ্যাক্ট করছে শ্রীলঙ্কা
প্রকাশিতঃ ৮ নভেম্বর ২০২৩, বুধ, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ
শামিকে নিয়ে মেতেছে ভারত, অথচ এক সময় বলা হয়েছিল...
প্রকাশিতঃ ৪ নভেম্বর ২০২৩, শনি, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ
পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড যেভাবে ‘নক-আউট’ পরিস্থিতিতে আছে
প্রকাশিতঃ ২ নভেম্বর ২০২৩, বৃহঃ, ৩:১৬ অপরাহ্ণ
ক্রিকেটের কোন নিয়মে আম্পায়ার ওয়াইড না দিতে পারেন?
প্রকাশিতঃ ২১ অক্টোবর ২০২৩, শনি, ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ