Dakhinadarpon খ্রিস্টান ধর্ম কখন এবং কেন খতনা প্রথা ত্যাগ করেছে? – Dakhinadarpon
Image

সোমবার || ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

খ্রিস্টান ধর্ম কখন এবং কেন খতনা প্রথা ত্যাগ করেছে?

প্রকাশিতঃ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্র, ২:৩৬ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ২৮১ বার।

খ্রিস্টান ধর্ম কখন এবং কেন খতনা প্রথা ত্যাগ করেছে?

জন্মের অষ্টম দিনে প্রত্যেক ইহুদি ছেলে নবজাতকের মতো যিশুর খতনা করা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রথাটি তার অনুসারীরাই পরে পরিত্যাগ করেছে। ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের প্রার্থনা করার ধরণও অনেকটা একই রকম। যেমন দলবদ্ধ হয়ে প্রার্থনা করা।

খ্রিস্টানরা যেটিকে ক্রিসমাস বা বড়দিন বলে সেটিকে ইহুদিরা বলে হানুক্কা। খ্রিস্টানদের ইস্টারকে ইহুদিরা বলে পাসওভার। এসব দিন খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা একই তারিখে পালন করা।

খ্রিস্টানরা কেন বাচ্চা ছেলেদের খতনা করে না তার উত্তর বাইবেলে আছে।

নিউ টেস্টামেন্ট বা বাইবেলের দ্বিতীয় সংস্করণ অনুসারে খৎনা নিয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে বিবাদ দেখা দিয়েছিল ৫০ সালের দিকে এবং এর প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সেইন্ট পল এবং সেইন্ট পিটার। এই বিষয়ে তারাই জোরদার ভূমিকায় ছিলেন।

“গির্জার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক সংঘাত ছিল এই খতনা নিয়ে,” বলেছেন মিগুয়েল পাস্তোরিনো। যিনি একাধারে উরুগুয়ের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম-দর্শন এবং দার্শনিক নৃ-তত্ত্বের অধ্যাপক, ধর্মতত্ত্বের স্নাতক, দর্শনের ওপর পিএইচডি ডিগ্রীধারী এবং প্রাক্তন পুরোহিত।

সেইন্ট পল সে সময়ে কোন সেইন্ট ছিলেন না, শুধু টারসাসের পল ছিলেন। অর্থাৎ তিনি টারসাসের খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারক ছিলেন।

রোমান ক্যাথলিকদের মতে যিনি কঠোরভাবে খ্রিষ্টান ধর্মের নির্দেশনা মেনে চলেন, খ্রিষ্টীয় জীবন রীতি অনুসরণ করেন, চার্চে থাকেন তাদেরকে সেইন্ট বলা হয়।

তবে পলের একজন ফারিশি হওয়ার কথা ছিল। ফারিশি বলতে মোজেস ( যিনি ইসলামে মুসা নবী হিসেবে পরিচিত) প্রণীত আইনের রক্ষক বোঝানো হয়েছে।

বাইবেলের মতে, তিনি সারা বিশ্বে মেসাইয়াহ বা ত্রাণকর্তার বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যিশুর শিষ্যদেরকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন।

টারসাসের পল মূলত গ্যালিলির পিটার, নাজারেথের যিশু এবং ইহুদি ধর্মের অন্যান্য প্রচারকদের মতো ছিলেন। তারা একসাথে ইহুদি খ্রিস্টানদের একটি দল তৈরি করেছিলেন। ওই দলের ছেলেদের খতনা করানো হতো।

তখন পর্যন্ত ইহুদি ধর্মই ছিল একমাত্র একেশ্বরবাদী ধর্ম। গ্রীক, রোমান এবং মিশরীয়রা সে সময় একাধিক দেব-দেবীতে বিশ্বাস করত।

ইহুদি অনুসারীদের উদ্দেশ্যে ইলোকিম (ঈশ্বর) আব্রাহামকে (ইসলাম ধর্মে নবী ইব্রাহিম) বলেছিলেন, “এটি আমার অঙ্গীকার যা আপনাকে অবশ্যই রাখতে হবে। আপনার, আমার এবং আপনার বংশধরদের মধ্যে থাকা প্রত্যেক পুরুষের অবশ্যই খতনা করতে হবে।”

ইহুদি ছাড়াও, মুসলমানরা – যারা নবী ইব্রাহিমকে বিশ্বাস করেন – আজও এই প্রথা অব্যাহত রেখেছে।

যদিও খৎনার বিষয়ে কুরআনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে হাদিসে (নবী মুহাম্মদের বাণী) বর্ণিত আছে।

ইতিহাসে খতনা

ছেলের যৌনাঙ্গের সামনের চামড়া কেটে অপসারণ করাকে খৎনা বলে। ওই চামড়া দিয়ে যৌনাঙ্গের অগ্রভাগ ঢেকে দেয়া হয়।

এটি এমন এক আচার যা ধর্মের মাধ্যমে শুরু হয়নি। বরং এর শুরু হয়েছে আরও অনেক আগে।

এটি বিশ্বের প্রাচীনতম অস্ত্রোপচার পদ্ধতি এবং ধারণা করা হয় প্রায় ১৫,০০০ বছর আগে মিশরে এই প্রথা উদ্ভূত হয়েছিল। যদিও এনিয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য মেলেনি।

শিশু বিশেষজ্ঞ বা পেডিয়াট্রিক সার্জন এবং গবেষক আহমেদ আল সালেমের লেখা “অ্যান ইলাস্ট্রেটেড গাইড টু পেডিয়াট্রিক ইউরোলজি” বইয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

আল সালেম তার বইতে ব্যাখ্যা করেছেন, অনেকে স্বাস্থ্যবিধি বা পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি বিবেচনা করে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আচার-অনুষ্ঠান পালন করার জন্য, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠান করতে, সেইসাথে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের চিহ্ন হিসাবে খতনাকে তাদের সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

“ধর্ম জীবনযাত্রার প্রতিটি বিষয়কে পরিচালনা করে। স্বাস্থ্যকর চলাফেরা থেকে শুরু করে খাদ্য, যৌনতা, রাজনীতি সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে ধর্মচর্চা।”

“ধর্মীয় ব্যবস্থাগুলো একসাথে জন্ম নিয়েছিল কারণ অন্য সবকিছুই সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত হতো। এবং প্রাচীনকালে ধর্ম ও সংস্কৃতিকে আলাদা করা কঠিন ছিল।”

‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলার ওপর যখন তারা আইন প্রণয়নের কথা ভাবছিল তখন তারা ধর্মীয়ভাবে এই আইন তৈরি করে।

‘কারণ আইনটি ঈশ্বরের আইন ছিল, অন্য কিছু ছিল না, ব্যাখ্যা করেন দার্শনিক ও পুরোহিত পাস্তোরিনো।

এই দৃষ্টিভঙ্গি ইহুদি ধর্মে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে কোন সংস্কৃতি তা অস্বীকার করেনি।

“অনেকের মতে, ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি, খৎনার স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা এই সংস্কৃতিকে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল।”

“কিন্তু এর আবির্ভাব স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা ভেবে হয়েছে নাকি এটি ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কিন্তু এটি অনস্বীকার্য যে খতনার সাথে স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতার একটি সংযোগ রয়েছে,” বলেছেন ইহুদি ধর্মযাজক বা র‍্যাবাই ড্যানিয়েল ডলিনস্কি৷

প্রাচীনকালে, সুমেরিয়ান এবং সেমিটিসরাও পুরুষদের খৎনা করত।

সুমেরিয়ানরা মূলত দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া সভ্যতা বা প্রাচীন ব্যাবিলনের জনগোষ্ঠী ছিলেন। অন্যদিকে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে যারা সেমিটিক ভাষায় কথা বলতেন তাদের সেমিটিস বলা হতো।

এরও অনেক কাল আগে এবং আরব থেকে অনেক দূরে ভিন্ন সংস্কৃতিতেও খতনা প্রচলন ছিল। মায়ান এবং অ্যাজটেক সভ্যতায় এর অনুশীলন ছিল বলে জানা গিয়েছে। ইউএনএইডস-এর ২০০৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

মায়া সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল দক্ষিণ এবং উত্তর-মধ্য মেক্সিকোতে অন্তত ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এবং অ্যাজটেক হল মধ্য মেক্সিকোয় গড়ে ওঠা সভ্যতা। যার সময় কাল ছিল ১৪শ থেকে ১৬শ শতকে।

যদিও খতনা সব জায়গায় সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়নি। বিশেষ করে হেলেনিস্টিক যুগে। ওই যুগে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীক সংস্কৃতির শক্তিশালী প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল।

প্রাচীন গ্রীকরা তাদের দেহ সুঠাম রাখতে ব্যায়াম করত এবং পুরুষের নগ্নতাকে তারা উপাসনা করত। পুরুষদের যৌনাঙ্গে সামনের চামড়া ছিল তাদের সৌন্দর্যের প্রতীক। এজন্য খতনাকে তারা ভালোভাবে নেয়নি।

“লম্বা যৌনাঙ্গ এবং যৌনাঙ্গের আগায় বেশি পরিমাণে পাতলা চামড়া থাকাকে তারা সাংস্কৃতিক পরিচয়, নৈতিকতা, সৌষ্ঠব, মহত্ত্ব, সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্যের প্রতিফলন হিসেবে দেখত।”

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য হিস্ট্রি অফ মেডিসিন এবং জনস হপকিন্স ইন্সটিটিউট ফর দ্য হিস্ট্রি অফ মেডিসিনের বুলেটিন অফ মেডিসিনে ২০০১ সালের একটি নিবন্ধে ফ্রেডরিক এম. হজেস এসব তথ্য জানান।

এদিকে খতনা করা হয়নি এমন কারও যৌনাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া যদি ছোট হয় এবং সেটা দিয়ে যদি পুরো অগ্রভাগ ঢেকে রাখা না যায় তাহলে সেই যৌনাঙ্গ ত্রুটিপূর্ণ বলে বিবেচিত হত।

“হেলেনিস্টিক যুগে ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে খতনার প্রথা টিকিয়ে রাখা বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ ইহুদিদের ওপর সে সময় হেলেনিস্টিক সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছিল এবং তারা সেই প্রভাবশালী সংস্কৃতির সাথে মিশে যেতে চেয়েছিল,”

কানাডার ম্যাকমাস্টার ডিভিনিটি কলেজের নিউ টেস্টামেন্টের অধ্যাপক সিনথিয়া লং ওয়েস্টফল তার ‘পল অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে এ কথা বলেন।

“সেই সাথে এমন আরও অনেক সময়েই খতনা করা অবৈধ ছিল। হেলেনিস্টিক যুগের রাজা অ্যান্টিওকাস এপিফেনেস তৎকালীন জুডিয়ার (জেরুজালেম) বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন তারা তাদের ছেলেদের আর খতনা না করায়। ফলস্বরূপ, কিছু ইহুদি পুরুষ তাদের খতনা গোপন করার চেষ্টা করেছিল,” সিনথিয়া লং ওয়েস্টফল তার বইয়ে উল্লেখ করেন।

সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল দ্বন্দ্ব

ইহুদি ধর্ম কাউকে তার ধর্মে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করে না। কিন্তু যিশু তাঁর অনুসারীদের যতটা সম্ভব তার বাণী সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে বলেছেন।

টারসাসের পল, যিনি সম্ভবত তার কৈশোরে বা প্রারম্ভিক যৌবনে জেরুজালেমে এসেছিলেন, তিনি শৈশবে গ্রীকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন।

যিশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পরে তিনি প্রধান ধর্ম প্রচারক হয়ে পড়েন। তিনি সে সময় ইসরায়েল, লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক, গ্রীস এবং মিশর ভ্রমণ করেছেন, যে অঞ্চলগুলো আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।

প্রধানত যাদেরকে তারা ‘বিধর্মী’ অর্থাৎ অ- ইহুদি বলে অভিহিত করতেন তাদের মধ্যে যিশুর বার্তা ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছিলেন তিনি।

বিধর্মীরা খতনাকে বা যৌনাঙ্গের অঙ্গচ্ছেদকে নির্বাসনের সাথে তুলনা করতো। এমনটাই জানিয়েছেন লং ওয়েস্টফল।

“অতএব, গ্রেকো-রোমান বিশ্বে খতনাকে কলঙ্কিত ভাবা হতো এবং এটি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য খুবই বেদনাদায়ক প্রক্রিয়া ছিল।”

পল ধর্ম প্রচারের সময় তাদের বলেছিলেন যে তাদের খতনা করা উচিত নয়। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে ঈশ্বরের কৃপা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল বিশ্বাস।

“এই নিয়মটি আমি সমস্ত গির্জায় প্রতিষ্ঠা করেছি। ইতোমধ্যেই যারা খতনা করেছেন তাদেরকে কী বলা হয়েছে? তাদেরকে বলা হয়েছে তারা যেন তাদের খতনা করার কথা গোপন না করে।”

“কেউ খতনা না করলে তাকে কী বলা হয়েছে? তাকে বলা হয়েছে তার খতনা করানো উচিত হবে না। খতনা করা হোক বা না হোক তাতে কোন পার্থক্য নেই।”

“গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ঈশ্বরের আদেশগুলো মেনে চলা” – গ্রীসের করিন্থ শহরের বাসিন্দাদের কাছে তার প্রথম চিঠিতে পল এসব কথা লিখেন।

“পল টারসাসের একজন ইহুদি অনুসারী ছিলেন। তিনি ছিলেন রোমান নাগরিক এবং তার মধ্যে গ্রিক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। তিনি খুব সংস্কৃতিবান ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি হিব্রু, গ্রিক এবং রোমান সংস্কৃতির সাথে কাজ করেছিলেন। তিনি তাদের ভাষা বুঝতেন,” বলেন মিগুয়েল পাস্তোরিনো৷

“ক্রাইস্ট (যিশুখ্রিস্ট) আমাদেরকে আইনের অভিশাপ থেকে রক্ষা করেছেন,” গ্যালাতিন শহরের বাসিন্দাদের কাছে লেখা চিঠিতে মোজেসের আইনের কথা উল্লেখ করে পল। সেখানে খতনার কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কিন্তু তার এই অবস্থান অন্যান্য ধর্ম প্রচারকরা গ্রহণ করেননি। বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত টাইটাসের চিঠিতে পল এই বিবাদের কথা উল্লেখ করেছিলেন। খৎনার পক্ষে থাকা অনেক ‘বিদ্রোহী, ভণ্ড এবং প্রতারকদের’ মুখ বন্ধ করার কথাও তিনি চিঠিতে বলেছিলেন।

তিনি অ্যাস্টিওখ শহরে পিটারের সাথে একদিন যে যুদ্ধ করেছিলেন সেই কথাও গ্যালাতিয়ানদের লেখা চিঠিতে মনে করিয়ে দেন। অ্যাস্টিওখ হল তুরস্কের একটি শহর যেখানে যিশুর অনুসারীদের একটি বিশাল সম্প্রদায় তৈরি হয়েছিল।

তাদের সংস্করণ অনুসারে পিটার বিধর্মীদের সাথে খেতেন কিন্তু ধর্ম প্রচারক জেমসের একদল প্রতিনিধি অ্যাস্টিওখ শহরে এলে পিটার ‘খতনা সমর্থন করার ভয়ে’ বিধর্মীদের থেকে আলাদা হতে শুরু করেন।

“আমি তাকে তার নিন্দনীয় আচরণের জন্য দায়ী করেছি,” পল গ্যালাতিয়ানদের বলেছিলেন।

“আমি সবার সামনে পিটারকে বলেছি – ‘আপনি ইহুদি হওয়া সত্ত্বেও যদি ইহুদিদের মতো জীবনযাপন না করেন, তাহলে কেন আপনি বিধর্মীদের ইহুদি ধর্ম পালনে বাধ্য করছেন?’

সমঝোতার মুহূর্ত

নিউ টেস্টামেন্ট বা বাইবেলে দ্বিতীয় সংস্করণ অনুসারে মোজেসের ( ইসলামে মুসা নবী ) আইন ও ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত কিছু ইহুদি খ্রিস্টান অ্যান্টিওখ শহরে ভ্রমণ করেছিলেন। তখন সেই আদিম খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা বিধর্মীদের বলেছিলেন যে তারা খতনা না করালে পরিত্রাণ পাবে না।

এই কারণেই পল জেরুজালেমে ফিরে আসেন এবং বিবাদ মীমাংসার জন্য ধর্ম প্রচারকদের নিয়ে একটি সভা ডাকেন। এটি ছিল জেরুজালেমের তথাকথিত কাউন্সিল।

সেখানে পল ব্যাখ্যা করেন, জুডিয়া বা জেরুজালেমের বাইরেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে তিনি ধর্মীয় বিশ্বাসের দিকে টানতে পেরেছেন এবং তার এই লক্ষ্য অব্যাহত থাকবে।

যারা মূলত খৎনার বিরুদ্ধে ছিলেন কিন্তু পরে একে সমর্থন করেছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ধর্ম প্রচারক জেমস।

তিনি বলেছিলেন, “আমাদের অবশ্যই বিধর্মীদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পথে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।”

এই দলে পিটারও ছিলেন। তিনি বলেন, “কেন তারা ওই মানুষদের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে ঈশ্বরকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে? এই ভার আমি বা আমাদের পূর্বপুরুষরা বহন করতে পারেনি? এটা হতে পারে না।”

ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে এই বিবাদ একটি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। পল বহু-ঈশ্বর পূজারীদের মধ্যে তার ধর্ম প্রচারের সাথে যুক্ত থাকেন। অন্যদিকে পিটার এবং জেমস ইহুদিদের সেবায় নিয়োজিত হন। এমনটাই ব্যাখ্যা করেছেন পাস্তরিনো।

বাইবেলের বিবরণ অনুসারে ধর্ম প্রচারকরা তারপর অ্যান্টিওখ, সিরিয়া এবং সিলিসিয়ার বিধর্মীদের কাছে একটি চিঠি পাঠান।

যেখানে বিধর্মীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, “প্রয়োজন ছাড়া তারা তাদের ওপর কোন বোঝা চাপিয়ে দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মূর্তিপূজার নামে কোন পশুকে শ্বাসরোধ করে বা জবাই করে রক্ত-মাংস বলি দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় সেই সাথে অনৈতিক যৌন সম্পর্ক থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়।”

চিঠিটি যখন এন্টিওখে পৌঁছায়, তখন বিশ্বাসীরা তা পড়ে উৎসব করেছিলেন; তাদেরকে খতনা করতে হবে না এই খুশিতে।

“পল বিধর্মীদের জন্য একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন এবং বাইবেলের বাণী প্রসার করতে গিয়ে তিনি বড় ধরণের বাধা দূর করেছিলেন,” লং ওয়েস্টফল বলেছেন।

সময়ের সাথে সাথে, ইহুদিদের মধ্যেও যে কট্টর মনোভাব ছিল সেটাও বিলীন হয়ে যায়।

খতনা করা খ্রিস্টান অনুসারী

মোজাইয়েক আইন (মোজেস প্রবর্তিত আইন) খ্রিস্টানদের গির্জা বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও আফ্রিকার একটি অংশে খতনাকে ধর্মীয় আচার হিসাবে পালন করা হতো।

মিশরের কপ্টিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়, ইথিওপিয়ার অর্থোডক্স খ্রিস্টান এবং কেনিয়ার নোমিয়া গির্জায় এই প্রথা চালু ছিল।

ধর্মীয় কারণে না হলেও বিশ্বে খ্রিস্টান অধ্যুষিত পাঁচটি দেশে বেশিরভাগ পুরুষদের খৎনা করা হতো। তার মধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

১৮৭০ সালে চিকিৎসক লুইস সায়ার নির্দিষ্ট কিছু রোগ প্রতিরোধ বা নিরাময়ের জন্য খৎনা চালু রাখার কথা বলেন। মি. সায়ার ছিলেন আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

এনিয়ে তার বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা এবং খৎনার বিষয়ে প্রচার প্রচারণা প্রায় সমস্ত নবজাতকের জন্য খৎনাকে সর্বজনীন করে তুলেছিল, আল সালেম বলেন।

পরবর্তীতে কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডেও খৎনা প্রথা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিতর্ক শুরু হয়।

পুরুষদের যৌনাঙ্গের সামনের চামড়া অপসারণের ঝুঁকি এবং সুবিধার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ভিন্নতা থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোথাও নবজাতকদের প্রতিরোধের জন্য এই খতনা অব্যাহত থাকেনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টানদের মধ্যে খতনা প্রথা অল্প-স্বল্প চালু রয়েছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

চিকিৎসা ও আশ্রয়ের জন্য কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন!

প্রকাশিতঃ ১১ নভেম্বর ২০২৪, সোম, ১১:০৭ অপরাহ্ণ

নিখোঁজের ৭ দিন পর শিশু মুনতাহার লাশ উদ্ধার, আটক...

প্রকাশিতঃ ১০ নভেম্বর ২০২৪, রবি, ১১:১৯ অপরাহ্ণ

পঙ্গুত্ব মৃত্যুর চেয়েও বিভীষিকাময়

প্রকাশিতঃ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবি, ৭:৩৬ অপরাহ্ণ

লিপ ইয়ার বা ২৯শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে ১০টি মজার তথ্য

প্রকাশিতঃ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহঃ, ১০:৩৪ অপরাহ্ণ

৩০শে ফেব্রুয়ারি – যে দিনটি ইতিহাসে মাত্র একবারই এসেছিল

প্রকাশিতঃ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহঃ, ১০:৩১ অপরাহ্ণ

রাস্তার নাম ‘মেডিসিন রোড’

প্রকাশিতঃ ১৮ অক্টোবর ২০২৩, বুধ, ১১:০৭ অপরাহ্ণ

শান্তিতে নোবেল পেলেন নার্গিস মোহাম্মদী

প্রকাশিতঃ ৬ অক্টোবর ২০২৩, শুক্র, ১০:৩৬ অপরাহ্ণ