রবিবার || ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফলাফল যেভাবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
প্রকাশিতঃ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধ, ২:২৬ পূর্বাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ২১৬ বার।
কোনো টুর্নামেন্টের মাঝ পর্যায়ে এসে নেট রান রেট নিয়ে হিসেব-নিকেশ করাটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবং দলের সমর্থকদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারের এশিয়া কাপের চিত্রটিও একেবারেই ব্যতিক্রম নয়।
টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ম্যাচ হেরে গিয়ে বা বাজে পারফর্ম করে আসর থেকে বের হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করা, তারপর পরের ম্যাচে জিতে রানরেটে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করা বা গ্রুপের অন্য দলগুলোর ম্যাচের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকার মত পরিস্থিতিতে একাধিকবার পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।
সবশেষ ২০২১ সালের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়ে সুপার টুয়েলভ পর্বে কোয়ালিফাই করতে রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।
এবারের এশিয়া কাপেও গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়ার পর অনিশ্চয়তা তৈরি হয় সুপার ফোরে ওঠা নিয়ে। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় পাওয়ায় অবশ্য আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার মধ্যকার শেষ ম্যাচের দিকে কার্যত তাকিয়ে থাকতে হয়নি।
তবে সুপার ফোরে আবার শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়ে এখন আবার শ্রীলঙ্কার দুই ম্যাচের ফলাফল আর ভারতকে বড় ব্যবধানে হারানোর সমীকরণের হিসেব-নিকেশ শুরু করতে হচ্ছে বাংলাদেশ দল ও দলের সমর্থকদের।
কারণ কাগজে-কলমে শ্রীলঙ্কা নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ – ১২ই সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে আর বৃহস্পতিবার ১৪ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে – জয় পেলে ভারতকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশের ফাইনালে কোয়ালিফাই করার ক্ষীণ সম্ভাবনা এখনো টিকে থাকে।
সমীকরণ কী বলছে?
শুক্রবার ১৫ই সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শুধুই নিয়ম রক্ষার ম্যাচে পরিণত হবে যদি শ্রীলঙ্কা তাদের পরের দুই ম্যাচ না জেতে।
১২ই সেপ্টেম্বরের ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ভারত জিতলেই তারা ফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করবে। তখন ১৪ই সেপ্টেম্বরের পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের বিজয়ী ভারতের সাথে ফাইনালে কোয়ালিফাই করবে।
আবার ১২ই সেপ্টেম্বর ভারত হারলেও যদি শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান-ম্যাচে পাকিস্তান জিতে যায়, সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ফাইনালে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ তখন শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তান ৪ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যাবে আর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলেও কোনো লাভ হবে না।
কাজেই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে সমীকরণের খেলা তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে যদি শ্রীলঙ্কা সুপার ফোরে অপরাজিত থাকে। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট হবে ৬ এবং ভারত ও পাকিস্তানের পয়েন্ট দাঁড়াবে ২’এ।
সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে তখন বাংলাদেশ ভারতকে হারালে তিন দলেরই পয়েন্ট দাঁড়াবে দুইয়ে।
তখন নেট রান রেটের হিসেবে নির্ধারিত হবে কোন দল ফাইনালে উঠবে।
তিন দলের মধ্যে এই মুহুর্তে নেট রানরেটে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, তাদের নেট রানরেট ৪.৫৬। তারপরেই অবস্থান বাংলাদেশের, -.০.৭৪৯।
আর ভারতের সাথে বড় ব্যবধানে হেরে নেট রানরেটে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। তাদের নেট রানরেট -১.৮৯২।
কী ব্যবধানে জয় পেতে হবে বাংলাদেশকে?
সমীকরণের স্বার্থে যদি ধরেও নেয়া হয় ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরে তাদের শেষ দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
এরকম পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা ৬ পয়েন্ট নিয়ে আর কোনো হিসেব ছাড়াই ফাইনালে উঠে যাবে। তাদের নেট রানরেটেে কোনো ভূমিকা থাকবে না অন্য দলগুলোর সমীকরণে।
পাকিস্তানও কার্যত তখন ছিটকে যাবে ফাইনালের হিসেব থেকে। কারণ শ্রীলঙ্কার সাথে হারলে তাদের নেট রানরেট বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
ভারতের সাথে বড় ব্যবধানে হেরে এখন তাদের নেট রান রেট বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান তিন দলের মধ্যে সবচেয়ে কম, -১.৮৯।
তখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে ভারতকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ ভারতের নেট রানরেট ৪.৫৬ আর বাংলাদেশের নেট রানরেট -.৭৪৯.
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দল স্বাভাবিকভাবেই চাইবে ভারত যেন শ্রীলঙ্কার সাথেও বড় ব্যবধানে হারে।
কারণ শ্রীলঙ্কার সাথে হারের ব্যবধান যত বড় হবে, ভারতের নেট রানরেটও তত কমবে আর ভারতকে শেষ ম্যাচে হারানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় ব্যবধানও তত কমতে থাকবে।
আপাতত হিসেবের সুবিধার্থে যদি ধরে নেয়া যায় ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা খুবই সামান্য ব্যবধানে জয় পেয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতের নেট রানরেট খুব একটা কমবে না।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের হিসেব-নিকেশ কী হবে?
শেষ ম্যাচে ভারত আগে ব্যাট করলে নিশ্চিতভাবে চাইবে বড় স্কোর দাঁড় করিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি করতে।
আগে ব্যাটিং করে ভারত যদি ৩৫০ রান করে, তাহলে বাংলাদেশকে ১২’এর উপর রানরেটে ব্যাট করে ভারতের রান তাড়া করে হবে।
অর্থাৎ নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে ম্যাচ জিততে তখন ভারতের ৩৫০ বাংলাদেশকে তাড়া করতে হবে ২৮ ওভার ২ বলে।
একইভাবে ভারত যদি ৩০০ রান করে, তাহলে বাংলাদেশকে সেই রান তাড়া করতে হবে ২৬ ওভার ৩ বলে। আর ভারতের রান যদি হয় ২৫০, তাহলে বাংলাদেশকে সেই রান তাড়া করতে হবে ২৪ ওভার ১ বলে।
এই হিসেবে, আগে ব্যাট করা ভারতকে বাংলাদেশ যত কম রাতে থামাতে পারবে, ততই বেশি সময় বাংলাদেশ পাবে সেই রান তাড়া করার জন্য।
অন্যদিকে বাংলাদেশ যদি আগে ব্যাটিং করে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ থাকবে বড় স্কোর দাঁড় করানোর। অন্যদিকে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে কম রানে আটকে ফেলার চাপটাও থাকবে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর।
বাংলাদেশ শুরুতে ব্যাট করে ৩৫০ রান করলে ভারতকে তাদের অল আউট করতে হবে ৮৪ রানের মধ্যে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যদি ৩০০ রান করে, তাহলে ভারতকে তাদের অলআউট করতে হবে ৩৪ রানের মধ্যে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন এরকম পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ টস জিতলে বোলিং নেয়ার চেষ্টা করবে এবং শ্রীলঙ্কার স্পিন উইকেটের ফায়দা তুলে ভারতকে যত কম রানে সম্ভব আটকে দেয়ার চেষ্টা করবে।
তবে এই সব সমীকরণ অকার্যকর হয়ে যাবে যদি সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানকে না হারাতে পারে অথবা আজ ভারত শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ এবারের আসরের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার সাথে ৫ উইকেটরে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের সাথে ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে সুপার ফোর নিশ্চিত করে।
কিন্তু সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে সাত উইকেটে হেরে যায় পাকিস্তানের সাথে। আর তার পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সাথে হারে ২১ রানে।
এখন পর্যন্ত খেলা চার ম্যাচের তিনটিতে হারলেও বাকি দলগুলোর খেলার ফলের ওপর নির্ভর করে এখনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।