শনিবার || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
শ্রীলংকা পারলে বাংলাদেশ পারেনা কেন?
প্রকাশিতঃ ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্র, ৩:২৮ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ২৫০ বার।
হার দিয়েই নিজেদের এশিয়া কাপ মিশন শুরু করলো বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের সহ আয়োজক শ্রীলংকা অনায়াসে পাঁচ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।
পাল্লেকেলেতে এ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৬৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। এই টার্গেটে পৌঁছাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি শ্রীলংকার।
ম্যাচ শেষে পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্যর্থতার জন্য আঙুল তুলেছেন ব্যাটসম্যানদের দিকে। তিনি বলেন, ব্যাটসম্যানরা ভালো টার্গেট দিতে না পারাতেই এ পরাজয় হয়েছে। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের দলের পারফরম্যান্স ঘিরে উঠেছে বেশ কিছু প্রশ্ন।
টস জিতে ব্যাটিং কেন?
পাল্লেকেলেতে এদিন টস জেতেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে টস জেতার পর তার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত বিস্মিত করে অনেককেই।
প্রতিপক্ষ অধিনায়ক দাসুন শানাকা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেটি বোঝা যায়। তিনি মনে করেন যে টসে হারা শ্রীলংকার জন্য এক অর্থে ভালোই হয়েছে। বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে লংকান অধিনায়ক বলেন, পরে ব্যাট করাই কাঙ্খিত ছিল তার।
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, “উইকেট সহজ ছিল না। কিন্তু আমাদের উইকেট দেখে মনে হয়েছে ব্যাটিং করা উচিত। সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল, কিন্তু আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি।”
তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি খুব একটা বাগড়া না দিলেও ২য় ইনিংসে বোলিংয়ে শিশির একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্পিনারদের কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হয়েছে।
সাবেক ক্রিকেটার ও ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশীদ রাহুল অবশ্য হারের জন্য টসের চেয়ে বেশি দায়ী করেছেন ব্যাটসম্যানদের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ব্যাটিং।
“উইকেট যতোটা খারাপ হবে ভেবেছিলাম, বাংলাদেশের আউটের ধরণে কিন্তু মনে হয়নি যে উইকেটে জন্য আউট হয়েছে। নাঈমের আউট দেখেন, তামিমের আউট দেখেন, তারা বল বুঝতে ভুল করেছে।”
শ্রীলংকায় মাঠে বসে ম্যাচটি কাভার করেছেন সাংবাদিক শিহাব আহসান। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশ বোলিংয়ে বৈচিত্র্য না থাকাটা হারের বড় কারণ।
“ব্যাটিংয়ে ১৬৪ করার পর বোলারদের আসলে করার তেমন কিছু ছিল না। তার উপর ওয়ান ডাইমেনশনাল বোলিং, সব অর্থোডক্স স্পিনার, শুধু কেউ ডান হাতে করছেন কেউ বাম হাতে।
প্রথম চারজনই বাঁহাতি কেন?
বাংলাদেশের হয়ে এদিন ওপেন করেন নাঈম শেখ ও নবাগত তানজীদ তামিম, যাদের দু’জনই বাঁহাতি।
ম্যাচের ২য় ওভারেই শ্রীলংকার অধিনায়ক বোলিংয়ে আনেন তার দলের প্রধান স্পিনার ডানহাতি মহেশ থিকসানাকে। নিজের ২য় বলেই তামিমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি।
এরপর দলীয় ২৫ রানে আরেক ডানহাতি ধনঞ্জয়া ডি সিলভা তুলে নেন নাঈম শেখকে।বাংলাদেশের পরের দুজন শান্ত ও সাকিব, এ দুজনও বাম হাতি ব্যাটার।
ফলে শ্রীলংকার বোলিংয়ের বিপক্ষে খানিকটা বেকায়দায় পড়তে হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপকে। কারণ শ্রীলংকার ৬ জন বোলারের মধ্যে মাত্র একজনই ছিলেন বাঁহাতি।
বাংলাদেশের হয়ে পাঁচ নম্বরে দেখা যায় প্রথম একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয়কে। আর তার সাথে মিলেই ইনিংস সেরা ৫৯ রানের জুটি গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত।
যদিও ম্যাচশেষ তিনি এটাকে কোন অসুবিধা হিসেবে মানতে চাননি।
“‘আমার মনে হয় না, এটা কোনো সমস্যা ছিল। কারণ, সবাই বাঁহাতি–ডানহাতি বোলারদের খেলার প্রস্তুতি নিয়েই আসে। তবে ব্যাটসম্যানরা উপরের দিকে পার্টনারশিপ গড়তে পারলে আমাদের এত স্ট্রাগল করতে হত না” – বলেন নাজমুল হোসেন।
লোয়ার মিডল অর্ডারে সংকট?
বাংলাদেশের হয়ে এদিন সেরা ইনিংস খেলেন ওপেনার নাজমুল হোসেন। একপ্রান্ত আগলে ১২২ বলে ৮৯ রান করে আউট হন তিনি, যাতে ছিল সাতটি চারের মার।
এরপর ২য় সর্বোচ্চ ইনিংস হল তৌহিদ হৃদয়ের ২০ রান। এছাড়া বলার মতো স্কোর নেই আর কারও।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ১৩ রানে আউট হবার মতো একেবারে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইন আপ। মাত্র ২ রানে পড়েছে শেষ চার উইকেট।
এদিন বহুল আলোচিত সাত নম্বরে নেমেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাত্র ৫ রানে দুর্ভাগ্যজনক এক রানআউটে কাটা পড়েন তিনি।
দায়িত্ব নিতে পারেননি ৮ নম্বরে নামা শেখ মাহেদীও। শান্তর আউটের পর পুরো ৫০ ওভার ব্যাটই করতে পারলো না বাংলাদেশ। অলআউট হয়েছে ৪৪ বল আগেই।
দলের লোয়ার মিডল অর্ডার যে অনেকদিন হলোই ভালো করতে পারছে সেটা যেন ফুটে উঠলো এ ম্যাচেও।
কেউ কেউ তাই নতুন করে প্রশ্ন তুলছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়া নিয়ে। এটাতে অবশ্য আপত্তি সাবেক ক্রিকেটার নিয়ামুর রশীদের।
“আমি মনে করি না এটা নিয়ে আলোচনার কিছু আছে। কাউকে না কাউকে তো সুযোগ দিতে হবে। যারা সুযোগ পাচ্ছে তারা যদি রান করতে না পারে তাহলে তো টিম ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচকদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না।”
“এখন নতুন যারা, তারা কেন সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। তাদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা দরকার। তরুণ খেলোয়াড়দের দায়িত্ব নিতে শিখতে হবে।”
শ্রীলঙ্কা পারলে বাংলাদেশ কেন নয়?
এ ম্যাচের আগে একাদশ সাজাতে হিমশিম খেতে হয়েছে শ্রীলংকান টিম ম্যানেজমেন্টকে।
দলের সেরা অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে। একাদশে ছিল না আরো চারজন প্রথম সারির ক্রিকেটার।
বিশেষ করে বোলিং লাইন আপে তাদের প্রথম পছন্দের সেরা চারজনই ছিল মিসিং। তারপরও যারা সুযোগ পেয়েছে দারুণ ভাবে প্রতিভা ও সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশ সেটা পারে নি। বিশেষ করে তামিম-লিটনের না থাকার অভাব ফুটে উঠেছে দলে টপঅর্ডারে।
অথচ শ্রীলংকার হয়ে মাত্র পঞ্চম ওয়ানডে খেলতে নামা মাথিশা পাথিরানা করেছেন ম্যাচসেরা পারফরম্যান্স। ৭ ওভার ৪ বল করে ৩২ রান খরচায় নিয়েছেন ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট।
আরেক তরুণ স্পিনার দুনিথ ওয়েল্লালাগেও নজর কেড়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের। আর এটাই ম্যাচে পার্থক্য পড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন মি. নিয়ামুর।
“শ্রীলংকাও খুব অভিজ্ঞ না, কিন্তু দলে জায়গা নেবার জন্য উদগ্রীব সবাই। যারা সুযোগ পেয়েছে ভালো করেছে। ওদের টপ তিনটা বোলার না থাকার পরও আমাদের ব্যাটসম্যানরা কেন ভালো করতে পারলো না সেটা তারাই বলতে পারবে।”
এখন ‘ডু অর ডাই’
শ্রীলংকা, বাংলাদেশের সাথে আফগানিস্তানকে নিয়ে এশিয়া কাপের বি গ্রুপকে আগে থেকেই বলা হচ্ছিল গ্রুপ অফ ডেথ।
প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ায় রোববার আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচটি এখন বাংলাদেশের জন্য ‘ডু অর ডাই’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ম্যাচ খেলতে বিকেলে কলম্বো থেকে লাহোরে যাবে বাংলাদেশ দল।
শুধু জিতলেই এখন চলবে না, তাকিয়ে থাকতে নানা সমীকরণের দিকেও। বাংলাদেশের সুপার ফোর ভাগ্য নির্ভর করবে মঙ্গলবার আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের উপর।
সেই ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশ দল বলছে তারা জিততে চায়।
“পরের ম্যাচ জিততে হবে, আমরা জেতার জন্যই খেলবো, তখন কি সিচুয়েশন দাঁড়ায় সেটা জেতার পর বোঝা যাবে।” – বলেন নাজমুল শান্ত।
কিন্তু বাংলাদেশকে আসলে আগে থেকেই রানরেট বাড়িয়ে নিতে বড় জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আফগানিস্তানের সাথে মাঠে নামতে হবে।