রবিবার || ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার খুলনায় বেশি, ঢাকায় কম: গবেষণা
প্রকাশিতঃ ১ এপ্রিল ২০২৩, শনি, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ১৯৯ বার।
দেশের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ২৭ শতাংশের বেশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ১৯ শতাংশের বেশি নারী অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বাকি ৮ শতাংশ নারীর গর্ভধারণের আগেই ডায়াবেটিস থাকে। তবে উপসর্গ না থাকায় তাঁরা তা জানতে পারেন না। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
১ মার্চ ‘ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস’ সাময়িকীতে ‘স্ক্রিনিং ফর জেসটেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস অ্যান্ড ইটস প্রিভিলেন্স ইন বাংলাদেশ: আ নেশনওয়াইড সার্ভে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, খুলনার নারীদের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি; এ হার ৩৯ শতাংশের বেশি। এ হার সবচেয়ে কম ঢাকায়—প্রায় ২৪ শতাংশ।
কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারীর খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৫ দশমিক ১ মিলিমোল/লিটার এবং গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮ দশমিক ৫ মিলোমোল/লিটার এলে তাঁর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হয়। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীর খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ মিলিমোল/লিটার এবং গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ১১ দশমিক ১ মিলোমোল/লিটার হলে তাঁর ওভার্ট ডায়াবেটিস বা গর্ভধারণের পূর্ব থেকেই ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হয়।
দেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব বুঝতে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছর ধরে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। দেশের ৬৪ জেলায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৭০টি সেন্টারে ৬ হাজার ৬৩১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী ওই গবেষণায় অংশ নেন। তাঁদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।
এ গবেষণার সঙ্গে সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ প্রকল্পের পরিচালক চিকিৎসক বিশ্বজিৎ ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ওপর ‘গ্লুকোজ টেস্ট’ করা হয়। ১ ঘণ্টায় ৫০ গ্রাম গ্লুকোজ পান করিয়ে দেখা যায়, ৪৫ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ওই নারীদের পরের দিন খালি পেটে এবং গ্লুকোজ পান করানোর দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষা করে দেখা যায়, ২৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে গ্যাসটেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস (জিডিএম) বা গর্ভধারণ করার পর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর হার ১৯। আর বাকি ৮ শতাংশের ওভার্ট ডায়াবেটিস বা তাঁদের গর্ভধারণের আগেই ডায়াবেটিস ছিল।
নভো নরডিস্ক রিসার্চ ফান্ডের সহায়তায় পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যাঁদের জিডিএম শনাক্ত হয়েছে, তাঁদের বয়স ২৫ বছরের বেশি। তাঁদের স্থূলতার পরিমাপ বিএমআই ২৫ কেজি/বর্গমিটারের সমান বা বেশি, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে এবং তাঁদের শারীরিক কার্যকলাপ তুলনামূলক কম।
যাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়, তাঁদের সন্তান জন্ম নেওয়ার পরও ডায়াবেটিস রয়ে যায় কি না, জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ ভৌমিক জানান, ডায়াবেটিক সমিতি ১ হাজার ১৩২ অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর ভিন্ন এক গবেষণায় দেখেছে, সন্তান জন্ম দেওয়ার এক বছরের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১৫ শতাংশ নারীর ডায়াবেটিস থেকে যায়।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) ২০২১ সালের তথ্যানুসারে, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে ১ কোটি ৩১ লাখ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সারা দেশে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ১০৯টি শাখায় নিবন্ধিত ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার কোথায় কেমন
গবেষণায় উঠে এসেছে, খুলনার পরের অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ, সেখানে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩৩ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া রাজশাহীতে প্রায় ৩১ শতাংশ, সিলেটে প্রায় ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশের বেশি, বরিশালে প্রায় ২৫ শতাংশ, রংপুরে প্রায় ২৪ শতাংশ এবং রংপুরের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে ঢাকায় সবচেয়ে কমসংখ্যক নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি ছিল, অর্থাৎ গ্লুকোজ চ্যালেঞ্জ টেস্ট বা জিসিটি পজিটিভ (রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ দশমিক ৮ মিলিমোলের বেশি) পাওয়া গেছে খুলনায় প্রায় ৬১ শতাংশ, ময়মনসিংহে প্রায় ৫৪ শতাংশ, সিলেটে ৪৮ শতাংশের বেশি, রাজশাহীতে প্রায় ৪৭ শতাংশ, ঢাকায় ৪৪ শতাংশ, বরিশালে প্রায় ৪৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে প্রায় ৪১ শতাংশ ও রংপুরে প্রায় ৪০ শতাংশ।
সচেতনতায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হয়
বারডেম একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠানও নতুন প্রকাশিত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে গর্ভের সন্তানেরও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, পরিমিত খাবার খেতে হবে, শরীরচর্চা করতে হবে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখতে নতুন দম্পতিদের মধ্যে নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান জানান, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা নামের একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। এটি যৌথভাবে পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে কাবিনামায় ‘সুস্থ মা, সুস্থ শিশু/সমৃদ্ধ দেশ/সকল গর্ভধারণ হোক পরিকল্পিত’ স্লোগান যুক্ত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়ে