Dakhinadarpon পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালনের সময়ে কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ – Dakhinadarpon
Image

শনিবার || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালনের সময়ে কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ

প্রকাশিতঃ ৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহঃ, ১০:৪৩ অপরাহ্ণ । পঠিত হয়েছে ৭৩ বার।

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালনের সময়ে কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ

পৌরাণিক চরিত্র রামচন্দ্র – যাকে ভারতের হিন্দুদের একটা বড় অংশ তাদের ভগবান বলে মনে করেন – তার জন্ম উৎসব রামনবমী পালিত হচ্ছে বৃহস্পতিবার।

এই রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা আর লাগোয়া হাওড়া শহরে কয়েকটি সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে হাওড়া শহরের কাজীপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামনবমীর মিছিল ঘিরে বড় সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

বেশ কিছু দোকান ও গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ এবং আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এলাকাটিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ পৌঁছিয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ওই ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, “তাদের মিছিল কেউ আটকায় নি। কিন্তু হাওড়ায় তাদের অস্ত্র আর বুলডোজার নিয়ে মিছিল করার অধিকার কে দিল?”

তিনি আরও বলেছেন “সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর জন্য তারা বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসেছিল।”

মিছিলটি নির্ধারিত পথ বদলিয়ে একটি সম্প্রদায়কে নিশানা বানিয়েছিল বলেও মিজ ব্যানার্জী মন্তব্য করেন।

এ ছাড়া কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় একটি মসজিদের সামনে দিয়ে রামনবমীর মিছিল যাওয়ার সময়ে সংঘর্ষ হয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলি জানিয়েছে।

এ সময় বেশ কিছু স্কুটার, মোটরসাইকেল আর গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

ডিজের মাইকে জয় শ্রীরাম

এরকম অশান্তি হতে পারে, এই আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের শিল্প শহর আসানসোলের এক স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রীই বৃহস্পতিবার স্কুলে আসে নি।

“ওদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে আজ রামনবমী, বাইকে করে অস্ত্র হাতে মিছিল বেরবে, যদি কোনও অশান্তি হয়, সেই ভয়ে বাবা-মায়েরা স্কুলে পাঠায় নি। আর সকাল থেকেই যেভাবে স্কুলের পাশে ডিজে বাজছে জয় শ্রীরাম করে, তাতে মনের মধ্যে একটা ভয় তো কাজ করছেই,” বলছিলেন ওই স্কুলের এক শিক্ষিকা।

তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে দিতে চাইলেন না, কারণ তিনি সরকারী স্কুলে পড়ান।

শিল্পাঞ্চলের শহর রাণীগঞ্জ আর আসানসোলে ২০১৮ সালে রামনবমীর দিনেই হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা বেঁধেছিল।

সেবছর গোটা রাজ্যে রামনবমীকে কেন্দ্র করে দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক ইমাম-পুত্র সহ অন্তত পাঁচজন

রামনবমীর মিছিলে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে অস্ত্রও

রামনবমীর দিন, বৃহস্পতিবার, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এবার পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পাঁচশোরও বেশি মিছিল করছে।

এর মধ্যে বেশ কিছু মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শনও করা হয়। হিন্দুত্ববাদী নেতারা অবশ্য বলেন যে ওই অস্ত্র কাউকে ঘায়েল করার জন্য নয়, অসুর বধের প্রতীক তাদের ওই অস্ত্র।

তবে কয়েক বছর আগেও এত সমারোহ করে রামনবমী পশ্চিমবঙ্গে পালিত হত না।

রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র কেয়া ঘোষ বলছিলেন, “ঠিকই, আগে সেভাবে পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালন করা হত না। কিন্তু এখন মানুষ বুঝতে পারছেন যে ভগবান রামচন্দ্র কোনও বিশেষ ধর্মের নয়, তিনি তো ভারতীয়ত্বের প্রতীক।

“আমরা যে রামরাজ্যের কথা বলি, সেটা হল একটা আদর্শ দেশ। আমরা তো রামরাজ্য স্থাপন করতে চাই। তেমনই পশ্চিমবঙ্গেও আমরা চাইব, রামরাজ্য স্থাপন করতে। আর যারাই ভগবান রামচন্দ্রকে পুজো করেন, তারাই রাস্তায় বেরচ্ছেন, এটা তো সুখের কথা,“ মন্তব্য কেয়া ঘোষের।

তার দাবী করেন, রামনবমী পালনের মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।

কিন্তু ঘটনাচক্রে, ২০১৮ সালে যখন আসানসোল রাণীগঞ্জে দাঙ্গা হয়েছিল রামনবমীর দিন, সেটা ছিল রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে। তারপরের বছর আবার ছিল লোকসভা ভোট। সেই ভোটে বিজেপি ১৮ টি আসন জিতেছিল।

এবছরও মাস কয়েকের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতের ভোট আসছে। আবারও মহাসমারোহে রামনবমী পালন করছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। যে উদযাপনের সামনের সারিতে বিজেপি নেতা-নেত্রীরাই থাকছেন।

যদিও বিজেপি সরাসরি রামনবমীর দিন কোনও মিছিল করে নি।

আবার রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও রামনবমী পালন করছে বৃহস্পতিবার থেকেই। নানা জেলায় তাদের উদ্যোগে রামনবমীর মিছিল, পুজোও হচ্ছে।

সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ

রামনবমীর দিনে ২০২২ সালেও পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে।

প্রতিবছরই সেই আশঙ্কা তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও বৃহস্পতিবার বলেছেন যে রামনবমীর মিছিল করতেই পারে কেউ, কিন্তু মুসলমান-প্রধান এলাকায় অশান্তি বাধালে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে।

ওই স্কুল শিক্ষিকার কথায়, তাদের শহরে বড় সংখ্যায় অবাঙালি থাকেন, তাই রামনবমী সেখানে ছোট থেকেই পালিত হতে দেখেছেন।

”কিন্তু গত বছর দশেক ধরে রামনবমীর দিন যেভাবে অস্ত্র হাতে কপালে গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে বাইক বাহিনী রাস্তায় নামে, জয় শ্রীরাম রীতিমতো হুঙ্কারের স্বরে দেওয়া হয়, তাতে ভয় তো লাগেই। এভাবে রামনবমী কিন্তু আগে হত না,“ তিনি বলেন।

‘বাঙালীরা, বিশেষ করে নারীরা ত্রস্ত’

বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগঠন বাংলা পক্ষর প্রধান গর্গ চ্যাটার্জী বলছেন, অনেক এলাকাতেই বাঙালিরা বিপদে রয়েছেন।

“শুধু আসানসোল রাণীগঞ্জে নয়, কলকাতা, হাওড়া, লিলুয়া, খড়্গপুর, ভাটপাড়া, শিলিগুড়ির মতো অনেক শহরেই বাঙালীরা, বিশেষ করে নারীরা ত্রস্ত,” বলছিলেন বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগঠন বাংলা পক্ষর প্রধান গর্গ চ্যাটার্জী।

তিনি বলছিলেন যে বাঙালী হিন্দুরা তো রামচন্দ্রের পুজো সেভাবে করতই না কখনও। এটা একটা নতুন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।

“যেসব এলাকায় রামনবমী মহা ধূমধাম করে করা হচ্ছে, সেখানে বহিরাগত তোষণ এবং তার ফলে অবারিত জনবিন্যাস বদলই প্রত্যক্ষভাবে দায়ী এর জন্য,” বলছিলেন মি. চ্যাটার্জী।

‘ধর্মকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা প্রদর্শন’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুন্ধতী মুখার্জী বলছিলেন, শুধু যে রামনবমী পালনের হিড়িক বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে – তা নয়।

এখানে হনুমান মন্দির আর পুজোর চল যেমন বেড়েছে, তেমনই মূলত মহারাষ্ট্রে যে গণেশ চতুর্থী পালন করা হত, সেটাও পশ্চিমবঙ্গের পাড়ায় পাড়ায় করা হচ্ছে।

তিনি বলছিলেন, “অযোধ্যার রামমন্দির আন্দোলন বা ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়েও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালনের এরকম ধুম পড়ে নি। এই যে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী এসব বেড়েছে গত কয়েক বছরে, তার পেছনে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির একটা অবদান তো আছেই।

“কিন্তু একই সঙ্গে বলব গত দশ বছরে এধরণের আরও অনেক পুজো বেড়ে গেছে। আসলে ধর্মটাকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় স্তরে ক্ষমতা প্রদর্শন করার একটা উপায় হয়ে গেছে এগুলো।”

“ধর্মকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষকে জড়ো করছে ওইসব ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিরা। তারা নিশ্চিতভাবেই রাজনীতির মানুষ,” বলছিলেন বিশ্লেষক অরুন্ধতী মুখার্জী।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কী ঘটেছিল?

প্রকাশিতঃ ২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোম, ১১:৩৮ অপরাহ্ণ

নেতানিয়াহু-হামাস নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির পরোয়ানা: আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিতঃ ২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহঃ, ১১:১৯ অপরাহ্ণ

আসামের করিমগঞ্জ নাম বদলে শ্রীভূমি, রবীন্দ্রনাথের আদৌ কোনও যোগ...

প্রকাশিতঃ ২০ নভেম্বর ২০২৪, বুধ, ১১:১৭ অপরাহ্ণ

পাকিস্তানের করাচি থেকে আসা জাহাজটির কন্টেইনারে যা যা আছে

প্রকাশিতঃ ১৭ নভেম্বর ২০২৪, রবি, ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

ইরানে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মানবাধিকার কর্মীর আত্মহত্যা

প্রকাশিতঃ ১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহঃ, ৬:৩৩ অপরাহ্ণ

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বন্ধুত্ব কতটা ‘মুখে’ আর কতটা ‘কাজে’?

প্রকাশিতঃ ১০ নভেম্বর ২০২৪, রবি, ১১:২৪ অপরাহ্ণ

২০২৫ সাল থেকে সুইজারল্যান্ডে ‘বোরকা নিষিদ্ধ’ আইন কার্যকর

প্রকাশিতঃ ৯ নভেম্বর ২০২৪, শনি, ১০:১৭ অপরাহ্ণ